♥গল্প♥ পর্ব_১
♥♥♥
শেখ গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি ,
সকাল ৯ টা ,
এম.ডি স্যারের আসার অপেক্ষা । সমস্ত স্টাফরা নিজ নিজ জায়গায় নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত । কারণ একটাই , পুরো বিজনেস ওয়ার্ল্ডে একটা ইন্ডাস্ট্রিই থাকবে আর তা হচ্ছে শেখ ইন্ডাস্ট্রি যা এম.ডি স্যারের আদেশ । এই কোম্পানীর একজন স্টাফও শান্তিতে ঘুমাতে পারেন না যদি না এম.ডি ঘুমাতে পারেন । তার একটাই লক্ষ্য আর তা হচ্ছে সাকসেস অনলি সাকসেস । এম.ডি স্যার অফিসে থাকা মানেই প্রত্যেকের জন্যে আতঙ্ক । অবশ্য সবাই এমনিতেও আতঙ্কিতই থাকে অফিসে ।
মোটামুটি ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি লম্বা , বেশ ভালোই ফর্সা শরীর , স্মার্ট চেহারা , রাগী রাগী চেহারা , ডেশিং পার্সোনালিটির একজন পুরুষ অফিসে পা রাখেন । প্রচন্ড রাগী , আর রগচটা স্বভাবের মানুষ সে । এই শহরের মোস্ট এলিজেবল ব্যাচেলর বিজনেসম্যান তিনি ।
তার অফিসে পা পড়া মানেই সবাই সাপের মত সোজা হয়ে যাওয়া । তবে মানুষটা অনেক ভালো মনের একজন মানুষ । এই অফিসের স্টাফরা একদিনের জন্যেও বলত পারবে না যে অকারণে কারো সাথে সে বাজে ব্যবহার করেছে । এই অফিসের এমন কোন স্টাফ নেই যাদের পরিবারের সাহায্য তিনি করেন নি ।
এম.ডি স্যার অফিসে এসে সোজা নিজের রুমে চলে যান । সবাই গুড মর্নিং বলায় সবাইকে তার রিপ্লাই করে নিজ কেবিনে গিয়ে বসেন তিনি । তার নিজ কেবিনে বসার পর বড় স্যার তার রুমে নক করেন । বড় স্যার মানে রমজান শেখ হলেন এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা । বহু কষ্টে তিলে তিলে গড়ে তোলা তার এই কোম্পানীর পুরোটাই এখন এই অফিসের এম.ডি মানে তার ছেলে সামলান ।
এম.ডি সাহেব ফাইল থেকে মুখ সরিয়ে মাথা উঁচু করে বললেন ,
নিজের বাবার মুখে স্যার ডাক শুনে কিঞ্চিৎ হেসে দেয় এম.ডি । আসলে তারা বাপ বেটা ।
এমন সময় টেবিলে থাকা টেলিফোনটা বেজে ওঠে । রমজান শেখ এর ইশারায় ফোন রিসিভ করে তার ছেলে ।
খুব দ্রুত কথা শেষ করে কাজে মন দেয় ফারহান । অন্যদিকে রমজান শেখ তার নিজ কেবিনে যান । কাজের ফাঁকে এইবার তার প্রাইভেট নাম্বারে ফোন আসে । প্রাইভেট নাম্বারে ফোন মানে বাড়ি থেকেই এসেছে । মোবাইলে নজর দিতেই দেখে স্ক্রিনে বোনের নাম্বার । রিসিভ করেই গম্ভীর স্বরে বলে উঠে ,
ইনি হচ্ছেন রমজান শেখের একমাত্র মেয়ে এবং ফারহানের কলিজার টুকরো একমাত্র ছোট বোন । তিফফাহুন শেখ সাজি । বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে সে , আচার ব্যবহার ভালো হলেও প্রচন্ডরকম বদমেজাজি সে । নিজের মত কিছু ন হলেই ইচ্ছামত চিল্লায় ।
অন্যদিকে ,
শেওরা পাড়া ,
বাসা নং ২৬৪ ,
গরম ধোঁয়া উঠা গরম চায়ের কাপে চুমুক দেয়া এক অতি সাধারণ একজন নারী বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে আপন মনে । মনে তার হাজারো কথা যা নিয়ে কল্পনায় থাকা তার অভ্যেস ।
হঠাৎ করে ভেতর থেকে মা রোকেয়া বেগমের ডাকে ধ্যান ভেঙে যায় তার ।
মায়ের এক ডাকেই সাড়া দেয় সে ।
মায়ের এক রকম বাধ্য মেয়ে অয়নি । বাবার চোখের মনি সে । হামিদ রাহমান সাহেবের তিন সন্তানের মাঝে অয়নি দ্বিতীয় । গায়ের রঙ দুধ সাদা রঙের , চোখ জোড়া বড় শান্ত , হাসিটার মায়ায় যে কেউ পড়তে বাধ্য , তার চলাফেরা যেন মাটিতেও টের পায় না । পুরো নাম ফাহমিদা রাহমান অয়নন্দিতা । সবাই ছোট করে অয়নি বলে ডাকে । বড় ভাই অয়ন রাহমান এবং ছোট বোন ফারহিনা রাহমান । ৬ রুমের একটা ফ্ল্যাটে মা বাবা ভাই বোনের সাথে তার ভালো থাকা । অয়নন্দিতার ভালো থাকা তার পরিবার নিয়ে । বড় ভাই চাকরি করে , ছোট বোন কলেজে পড়ে আর অয়নি এইবার অর্নাস ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী । নিজের পেনশনের জমানো টাকা দিয়ে এই ফ্ল্যাট টা কিনে নিয়েছেন হামিদ রাহমান । এই দুর্মূল্যের বাজারে মাথা গোজার ঠাই হিসেবে নিজের একটা বাড়ি অত্যন্ত প্রয়োজন । না হয় বাসা ভাড়া দিয়ে বাকি খরচ চালানো সম্ভব নয় । এখন দুই মেয়েকে পার করে ছেলের সংসার গুছিয়ে ছাড়া হাত পা হামিদ রাহমান আর রোকেয়া বেগমের ।
দৌড়ে এসে মায়ের সামনে দাঁড়ায় অয়নন্দিতা । মা যেন তার একমাত্র বান্ধবী । মায়ের কাছে আর বোনের কাছে সব কথা মন খুলে বলতে পারে সে । খুব বেশি শান্ত স্বভাবের না হলেও একেবারেও চঞ্চল নয় অয়নন্দিতা । মেয়েকে দেখে রোকেয়া বেগম বলে উঠেন ,
মায়ের কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থাকে অয়নন্দিতা । মেয়ে চুপ থাকা দেখে রোকেয়া বেগম বলেন ,
আর তাছাড়া ছেলেকেও দেখবো আমরা । তোর ভালো লাগলেই এগুবো আর না লাগলে বাদ , কেমন ?
মায়ের কথা এমন হলে কি হবে অয়নন্দিতা ঠিক জানে তার মা ভালো ছেলে পেলে তার বিয়ে ধরবে । তার মায়ের কথায় এইটাই উত্তম সময় বিয়ে করার । তাই সেও আর এই বিষয়ে তেমন কথা বলে না । কারণ সে জানে তার মা এই বিষয়ে কারো কথা শুনবে না ।
চুপচাপ নিজের ঘরে গিয়ে জানালার ধারে চোখ রেখে আকাশ পানে চেয়ে আছে সে । এই সময়ে তার বাবাও ঢাকার বাহিরে । বড় ফুফুর শরীর খারাপ সেখানে গিয়েছেন তিনি । ফারুও (ফারহিনা) কলেজে আর তার ভাইও অফিসে । খুব একা লাগছে এই সময়টা । কাউকে প্রয়োজন এই মুহুর্তে যার সাথে নিজের অন্তরের কথা গুলো শেয়ার করা যায় । অয়নন্দিতা বরাবরই আকাশ ভালোবাসে । একা থাকলে তার শত কথার সাক্ষী হয়ে রয় আকাশ । আজও তার ব্যাতিক্রম কিছু ঘটেনি । আকাধ পানে চোখ রেখে প্রশ্ন গুলো আকাশের দিকেই ছুড়ে দিচ্ছে সে ।
লেখকঃ জান্নাতুল ফেরদৌস
Leave a Reply