গল্প♥
♥♥♥
রাতের বেলা ফারহানের ঘুম হারাম হয়ে যায় । মেয়েটাকে আরও একবারের জন্যে হলেও তার পেতে হবে । আজ যেই অপমানটা সে করে গেছে ফারহানকে তার সুদ সমেত ফেরত দিতে চায় সে মেয়েটাকে । রাত প্রায় তিন টা বেজে গেছে । অথচ ফারহানের চোখে ঘুম নেই । উঠে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপরে থাকা সেই ছোট দুল জোড়া হাতে নেয় ফারহান । বার বার মেয়েটার মুখ টা চোখের উপর ভেসে উঠছে ।
হঠাৎ করে মেসেঞ্জারে ফোন আসে তার । মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে রাজুর ফোন । রাজু তার সব থেকে কাছের মানুষ । খুব ভালো বন্ধু তার । রিসেন্টলি বিয়ে করেছে তখন ফারহান কানাডা ছিল । কিন্তু এত রাতে ফোন দেয়ায় চমকে যায় ফারহান । ফোন রিসিভ করে সে ,
রাজুর কথায় ফারহান আজ বিকেলে ঘটে যাওয়া সম্পূর্ণ ঘটনার বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে । সব শুনে রাজু বেচারা হেসে খুন ।
ফারহানের রাগ বরাবরই অনেক বেশি । এমনিতে অনেক শান্ত কিন্ত যখন রাগ উঠে সে আর নিজের মাঝে থাকে না । চারপাশের সব কিছু লন্ডভন্ড করে দেয় । কাকে কি বলে তার মাথায় থাকে না । হ্যাঁ , এটাই ফারহান শেখ ।
সকাল বেলা খাবার টেবিলে অয়নন্দিতাকে ঝাড়ছে তার মা । কানের দুল হাওয়া কেন ? কি বলবে না বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে । আবার মিথ্যাও বলতে পারবেন না । কারণ অয়নন্দিতা চেয়েও মিথ্যা বলতে পারে না । তার মন সায় দেয় না মিথ্যাকে । টেবিলে সবাই ছিল । অয়ন , ফারু , রোকেয়া বেগম । সবার সামনে বকা খাচ্ছে কিন্তু মুখ খুলে কিছুই বলছে না । এইদিকে অয়নের আবার বকা ঝকা একদম অপছন্দের । তাই সে মাকে বলে ,
মায়ের মুখ বন্ধ করে দিয়ে অয়ন খাবার টেবিল থেকে উঠে যায় । অয়নন্দিতাও রুমে চলে যায় । মনে মনে নিজের উপর প্রচন্ডরকম জিদ উঠছে তার । গতকাল দুল জোড়া না দিলেও পারতো সে । কিন্তু ,
নিজের ঘরে থেকে একা একা বক বক করছে অয়নন্দিতা । তখনই অয়ন রুমে আসে ,
অয়নন্দিতা তার ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে । এইভেবে যে তার ভাই তাকে অনেকটা বুঝে । তাই আর নিজ থেকে কিছুই বলে নি ।
বোনকে বুঝিয়ে অয়ন অফিসে চলে যায় । অয়নন্দিতার চিন্তার মাঝে হঠাৎ ফোন বেজে উঠে । মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে নিশাত ফোন করেছে । নিশাত তার বান্ধবী , সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকে এক সাথে আছে এরা । মোবাইল কানে নিয়ে ,
শেখ ভিলা ,
ফারহান নাস্তা করেই অফিসে চলে গেছে । বাড়িতে রওশন বেগম , সাজি আর মারুফা । কোন বিশেষ কারণে সাজি ফারহানের রুমে যায় । ফারহানের বুক সেল্ফ থেকে দরকারি জিনিস টা নিয়ে সাজি চলে আসবে ওমনি নজর পড়ে ভাইয়ের ড্রেসিং টেবিলের দিকে । এক পা দু পা করে এগিয়ে গিয়ে যায় সেখানে । এক জোড়া দুল দেখে অনেক অবাক হয় সাজি । দুল জোড়া হাতে নেয় সে , এপাশ ওপাশ ঘুরিয়ে কিছুক্ষণ লক্ষ্য করে দুল জোড়ায় । তারপর বলে ,
দুল জোড়া জায়গা মত রেখে গাইতে গাইতে সাজি ফারহানের রুম ত্যাগ করে ।
সারাদিনের ব্যস্ততার পর রাতে ল্যাপটপ নিয়েও কাজে বসে ফারহান । এর মাথায় যে কত ধরে আল্লাহ পাক জানেন ।
এত কাজ কিভাবে করেন ? কাজ করতে বসলে সব ভুলে যায় ফারহান । ঘড়িতে ১ টা বেজে ২৫ মিনিট , সে এখনও কাজ করে । মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে মেজাজ তার তুঙ্গে উঠে যায় । ৩ নাম্বার এক্স গার্লফ্রেন্ড মাইশা ফোন করেছে । মেয়েগুলোকে এখন এত পরিমাণ বিরক্ত লাগে ফারহানের যে সামান্য ফোন করলেও চটে যায় সে । লাগাতার ফোন করায় আরও মেজাজ খারাপ হয়ে যায় তার । ফোন ধরে উরাধুরা বকা শুরু করে দেয় সে ,
ফারহানের মেজাজ অনেক খারাপ হয়ে যায় । রাগে কান দিয়ে ধোঁয়া বের হয় তার ।
এই বলে তখনই লাইন কেটে দেয় ফারহান । মেজাজ এখন তার ৮৮০ ভোল্টেজ হয়ে আছে । সব কিছু ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করতেছে এই মুহুর্তে । মেয়ে গুলো চরম লেভেলের ছ্যাচড়া । মোবাইলের সিম অফ করে দিয়ে ফারহান সে রাতের মত কাজ থেকে অবসর নিয়ে ঘুমের রাজ্যে যাত্রা শুরু করেন ।
শুক্রবার ,
সিটি মহল ,
মিরপুর – ১ ,
রাত ৮ টা বেজে ২৫ মিনিট ,
ফারহান সবেমাত্র এসে পৌঁছেছে অনুষ্ঠানে । ফারহানকে দেখে রাজু এগিয়ে আছে । সেখানে ফারহানের আরও কিছু বন্ধুরাও ছিল । তারাও এগিয়ে এসেছে । অন্যদিকে সেখানে উপস্থিত কিছু মেয়ে পারছে না ফারহানকে গিলে খাচ্ছে । যেন পুরুষ ধর্ষণ চলছে এখানে , মেয়েরা তাদের চোখ দিয়েই ধর্ষণ করছে ফারহানকে । প্রতিটা মেয়ের চোখই ফারহানের দিকে । মেরুন রঙের স্যুট টায় দারুণ লাগছিল তাকে । এক কথায় অসাধারণ লাগছিল ।
আরেক বন্ধু বলে উঠে ,
এই কথা শুনে ফারহান রাজুর দিকে তাকায় । আর রাজু হালকা হেসে দেয় । ফারহান বুঝে গেছে রাজু সবটা এদের বলে দিয়েছে ।
ওদের দেখে বন্ধু মহলের সবাই হেসে দেয় । কিছুক্ষণ নিজেরা কথা বলে ফারহান রাজুর বউয়ের কাছে যায় । সেখানে হালকা কথা বলে সোজা স্টেজের ডান পাশে চলে যায় সে । সেখানে সবাই মিলে হাসি আড্ডায় মেতে উঠে ।
হঠাৎ করেই সেখানে পা পড়ে এক নারীর । কে জানতো , এই নারীর পা পড়বে আর সব ছেলের নজর একবার হলেও তার দিকে যাবে । আফসোস সেই মুহুর্তে ফারহানের ফোন চলে আসে । ফারহান সাইডে কথা বলার জন্যে গেলে তখনই তার বন্ধুদের নজর যায় সেই নারীর দিকে । ফারহান কথা সেড়ে আসতেই ওর বন্ধুরা বলে ,
সবার কথায় ফারহানও পিছন ঘুরে দাঁড়ায় । আর সেই সাথে রাজুর স্ত্রী নিশাতও ” অয়নন্দিতা ” বলে একটু জোরেই ডাক দেয় । অয়নন্দিতা নাম টা শুনেই ফারহান তাকিয়ে যায় পেছনে আর দেখে লাল শাড়িতে , খোপার এক পাশে ৪ টা গোলাপ দিয়ে চুল বাঁধা এক নারী দাঁড়িয়ে আছে । নারীটিকে দেকে ফারহান বেশ চমকে উঠে । কারণ এই নারীই সেই নারী , যার জন্যে ফারহানের মেজাজ আজ দুই দিন যাবত খারাপ । যে নারী তাকে নিজের কানের দুল দিয়ে অপমান করেছে । ফারহানের তখনই মেজাজ খারাপ হয়ে যায় । অন্যদিকে অয়নন্দিতা তার বেস্ট ফ্রেন্ড নিশাতকে দেখে মিষ্টি হাসি দেয় ।।
চলবে………………………
লেখকঃ জান্নাতুল ফেরদৌস
Leave a Reply