পি টিভি নিউজ ডেস্ক: আরবী বর্ষের নবম মাস রমযান। প্রতি বছর দুনিয়ার মুসলমানদের সামনে হাজির হয় প্রশিক্ষণের মাস আত্ম উন্নয়নের মাস, স্বাস্থ্য-সম্পদ ও মানবতা মনুষ্যত্বের সুরক্ষার চাবিকাঠি হিসেবে মাহে রমযান। রোযার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে নৈতিক শক্তির বিকাশ ঘটিয়ে আত্মশুদ্ধি লাভ করা। রোযা মানুষের মধ্যে প্রচন্ড নৈতিক শক্তির বিকাশ ঘটায়। রোযা নৈতিক শক্তি সম্পন্ন মানুষ তৈরীর সবচেয়ে বড় এবং কার্যকর উপাদান। এই নৈতিক শক্তি-ই একজন মানুষকে আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ থেকে আত্মরক্ষা করতে সাহায্য করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে দুর্বার বেগে এগিয়ে যাবার শক্তি যোগায়। অর্থাৎ আল কোরআনের দেখানো পথ অনুযায়ী জীবন গঠনের ক্ষেত্রে রোযার ভূমিকা অপরিসীম। তাই সহজে বলা যায় যে, রমযান মাস হচ্ছে মানবতা মনুষ্যত্বের অবক্ষয় হতে উদ্ধার করার মাস। পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় রাখার বাস্তব দৃষ্টান্ত। একজন মুমিনের সম্পদ স্বাস্থ্য ও আত্মার পরিশুদ্ধতা হাসিলের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।
প্রতিটি মানুষের শরীর দেহ ও রূহের সমম্বয়ে গঠিত দেহ তার টিকে থাকা ও উৎকর্ষের জন্য প্রতিনিয়ত বস্তুগত নানা ধরনের উপাদান পেতে চায়। কিন্তু রূহ এসব বস্তুগত উপাদানে তুষ্ট হয় না, সমৃদ্ধ হয় না, শান্তি ও স্বস্তি পায় না, রূহ জাগতিক কোন খাবার খায় না। আল্লাহর স্মরণ, আল্লাহর নির্দেশিত পথে পথ চলা,তাঁর বিধি নিষেধ গুলো যথাযথভাবে পুঙ্খানুরূপে পালন করলেই রুহের খাবার দেয়া হয়, রূহ পরিতৃপ্ত হয় সে শান্তি সমৃদ্ধি লাভ করে। একজন মানুষ উন্নত মানুষে পরিণত হয় যখন সে তার দৈহিক চাহিদার কাছে ক্রমাগতভাবে আত্মসর্মপণ না করে নৈতিক সীমারেখা লঙ্ঘন করা থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে। আর নৈতিক সীমা রেখা লঙ্ঘন করা থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য প্রয়োজন প্রবল নৈতিক শক্তি। একজন মানুষের মাঝে প্রবল নৈতিক শক্তি বিকাশের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে সব প্রক্রিয়া নির্দেশ করেছেন তার বিশেষ ব্যবস্থা হলো সিয়াম সাধনা তথা রমযানের রোযাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে সর্তকতার সাথে পালন করা ।
সত্য ও ন্যায়ের পথে নিজকে টিকিয়ে রাখা অপরকে এই পথে আহ্বান করার জন্য যে পরিমাণ ধৈর্য্য শক্তি সাহসিকতা আত্মত্যাগ ও মনোবলের দরকার মাহে রমযান এর উপযুক্ত হাতিয়ার। একটি সুন্দর সুশীল আর্দশ সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা উন্নত জাতি গঠনের স্থায়ী ব্যবস্থাপত্রের নাম মাহে রমযান। শয়তানের প্ররোচনায় মানুষের মানবিক গুণাবলীতে ঘুণে ধরে, ক্ষয় হয়ে যায় তাদের সত্য বলা, সত্য ও সঠিক পথে চলার হিম্মত হারিয়ে ফেলে, অবিচার পাপাচার দুরাচার জুলুম অত্যাচার ও নিপীড়নে জড়িয়ে পড়ে ফলে সমাজ ব্যবস্থা নানাবিধ সমস্যায় কলুষিত হয়ে পড়ে। উল্লেখিত সমাজ বিধ্বংসী বদ অভ্যাসগুলোকে জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে প্রতিটি ঈমানদারকে জান্নাতী চরিত্রের অধিকারী করে গড়ে তুলতেই মাহে রমযান। এই দৃষ্টিকোণ থেকে রমযান শব্দের অর্থ করা হয়েছে জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া পাপ পংখিল হতে বিরত রাখা ইত্যাদি । মানুষের মনুষ্যত্ব ও মানবিক গুণাগুণগুলোকে প্রবৃত্তির তাড়না ও কুরিপু বাধাগ্রস্ত করে সুন্দর পৃথিবীর লোভনীয় বস্তুগুলোর মোহে পড়ে মহান মাবুদের বিধি-নিষেধ বেমালুম ভুলে যায় একে অপরের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ পরনিন্দা গীবত, চোগলখোরী গালি গালাজসহ নানা ধরনের বদ অভ্যাসে লিপ্ত হয়ে পড়ে আর রোযা এসব অপকর্ম থেকে ব্যক্তিকে সুরক্ষা প্রদান করে বলেই রোযাকে হাদিসে “ঢাল” হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
সারা বছর ইসলামী আদর্শে উজ্জিবীত থাকা দৈনন্দিন জীবনে ইসলামী কৃষ্টি-কালচার লালন করার এক অনুপম অনুশীলনের জন্য যে নৈতিক মনোবল প্রয়োজন তা বলিষ্ঠতর করার ক্ষেত্রে সিয়াম সাধনার কোন বিকল্প নেই। রোযার উদ্দেশ্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা’য়ালা সুরা বাকারার ১৮৩ নাম্বার আয়াতে বলেন “তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর যেন তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পার।
ইসলামের দার্শনিক ইমাম গাজ্জালী (রাহ:) বলেন যে ঐশ্বরিক গুণে গুণাম্বিত করে তোলাই রোযার উদ্দেশ্য। মানুষ তখনই ঐশ্বরিক গুণে গুণান্বিত হবে যখন তাকওয়া অর্থাৎ খোদা ভীতি বা পরহেজগারী অর্জন করতে সক্ষম হবে। তাকওয়া অর্জন সম্ভব হলেই আত্ম উন্নয়ন সম্ভব। আর আত্ম উন্নয়ন এমন একটি বিষয় যা ছাড়া কোরআনের আলোকে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র কায়েম করা সম্ভব নয়। আত্মিক উন্নয়নের প্রচেষ্টা ছাড়া রমযানের সিয়াম সাধনা হবে সেহরি খেয়ে সারাদিন উপবাস থেকে দিনের শেষে ঘটা করে ইফতার করার নাম সর্বস্ব অনুষ্ঠান মাত্র। মানবতার মহান শিক্ষক, বিশ্বসেরা মনোবিজ্ঞানী রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন “যে লোক মিথ্যা কথা ও মিথ্যা আমল পরিত্যাগ করলো না, তার খাদ্য ও পানীয় পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনোই প্রয়োজন নেই (বুখারী)।
রমযান হলো অব্যাহত তীব্র দহনের সমষ্টিগত একটি প্রশিক্ষণ কোর্স। যা কুপ্রবৃত্তিকে জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে মানুষের দৈহিক সত্তার ওপর আত্মিক সত্তার নিয়ন্ত্রণ আরোপের অসাধারণ শক্তি যোগায় রোযা। বছর ঘুরে বার বার সেই রমযান মাস আমাদের মাঝে আসে এবং চলে যায়। আমরা ও সেই মাস ঘটা করে উৎযাপন করি। কিন্তু সমাজ থেকে পাপাচার অন্যায় অত্যাচার ও জাহেলিয়াতের অবসান ঘটাবার শক্তি, সাহস ও যোগ্যতা আমাদের মাঝে কেন সৃষ্টি হচ্ছে না? কেন রমযান শুরু হওয়ার পূর্বেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর দর আকাশচুম্বী হয়ে পড়ে? অন্য দিকে রমযান শুরু হওয়ার সাথে সাথে দেশের মসজিদগুলো কানায় কানায় ভরে যায় আবার যেইমাত্র রমযান শেষ তুলনামূলকভাবে মসজিদ অনেকাংশেই ফাঁকা ! বিশেষ করে ফজরের নামাজে ১/২ কাতার এর বেশী নয় এরই বা কারণ কি? রোযা আসে রোযা চলে যায় রোযা আমাদেরকে কি দেয় আমরা রোযা হতে কি পাই? এর জবাব কি? আত্মিক উন্নয়নের প্রচেষ্টা ছাড়াই সিয়াম সাধনার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা সর্বস্ব রমযানুল মোবারক উদযাপন করা। সত্যিকার অর্থে আমরা যদি সিয়াম সাধনা করতে পারি তাহলে রমযানুল মোবারক নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো আমাদেরকে উপহার দিবে যা একটি সমাজ, একটি দেশ তথা গোটা বিশ্ব ক্রমান্বয়ে সুশীল বিশ্বে পরিণত হতে বাধ্য।
বিষয়গুলো নিম্নরূপ:
১. তাকওয়া অর্জন : খোদা ভীতি এমন একটি বিষয় যা মানুষকে প্রকাশ্যে গোপনে রাতের আঁধারে একেবারে নির্জন অবস্থায় ও সকল প্রকার দুর্নীতি, অবৈধ ইনকাম অথবা বৈধ ইনকাম অবৈধ ব্যয়সহ সকল পাপাচার হতে রক্ষা করে। আর খোদাভীতি বা তাকওয়া এত বড় মহৎ গুণের নাম যা কোন সমাজের মানুষ অর্জন করতে পারলে সে সমাজ জান্নাতের বাগানে পরিণত হবে তখন কোন শাসক যেমন শোষক হবে না বেড়ায় ক্ষেত খাবে না, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে সমাজের প্রতিটি স্তরে স্তরে একে অপরের জান মাল ইজ্জত আবরুর নিরাপত্তা জামিনদার হয়ে যাবে। সকল প্রকার ভয় ভীতি আতংক দূর হয়ে যাবে মনে হবে পুরো জগতটাই যেন জান্নাতের বাগান! কিন্তু দু:খজনক হলে ও সত্য যে আমরা প্রতি বছর সিয়াম পালন করছি অথচ সামাজিক অবক্ষয় জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলছে যা পর্যায়ক্রমে শূন্যের কোটায় আসার কথা ছিল !! তাহলে এর জবাব কি ? জবাব একটাই রোযা পালন হচ্ছে কিন্তু তাকওয়ার গুণ অর্জন হচ্ছে না। যখন কোন মানুষ তাকওয়ার গুণ অর্জন করবে তখন তার দ্বারা কোন প্রকার অন্যায় কাজ সম্ভব হবে না। রোযা এর প্রথম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ হাতিয়ার।
২. সংযমী হওয়া : লোভ-লালসা, কাম, ক্রোধ, ইত্যাদি মানুষের পরম শত্রু এ সকল কু-রিপুর তাড়নায় মানুষ বিপদগামী হয়ে থাকে। রোযা মানুষকে লোভ লালসা, রাগ,ক্রোধ ইত্যাদি কু প্রবৃত্তি হতে হেফাজতের মাসব্যাপী ট্রেনিং দেয়। যদি কেউ ঈমান ইয়াকিন ও ছাওয়াবের নিয়তে সর্তকতার সাথে রোযা পালন করেন। আর এই প্রক্রিয়ায় রোযা পালনে অতীত জীবনের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায় ব্যক্তির সম্পদ ও স্বাস্থ্য জাহান্নামের আগুন হতে সুরক্ষা লাভ করে।
৩. উত্তম চরিত্র গঠন : সৎ চরিত্র সুন্দর সমাজ বির্নিমানের পূর্বশর্ত। রোযার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জিত হয় আর তাকওয়া মানুষের ব্যক্তি চরিত্রকে মহান আদর্শে গড়ে তোলে। ফলে ব্যক্তি ও সমাজ এক মহান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়।
৪. নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রশিক্ষণ : মাঝে মধ্যে রাস্তা ঘাটে যানজটে অনেক সমস্যা তৈরী হয় ট্রাফিক নিয়ম বহির্ভূত ড্রাইভিং এর জন্য। দীর্ঘ একটি মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রশিক্ষণ লাভ করা যায়। নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত না খাওয়া আবার ইফতার খেয়ে কিছুক্ষণ পর আবার ট্রেনিং ক্লাস তথা তারাবির নামাযে সুশৃঙ্খল হয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নির্দিষ্ট ইমাম (নেতার) অনুসরণের মাধ্যমে মহান মাবুদের সুমহান বাণী শ্রবণ করা এক বিশাল নিয়ম শৃঙ্খলারই প্রশিক্ষণের নামান্তর।
৫. সময়ানুবর্তিতা শিক্ষা : নির্দিষ্ট সময় সেহরি, নির্দিষ্ট সময় ইফতার, নির্দিষ্ট সময় তারাবীর নামাজে হাজির হওয়া ইত্যাদি বিষয় সমূহের প্রতি খেয়াল করলে অতি সহজে বুঝা যায় যে রমযান আমাদেরকে সময়ানুবর্তিতা শিক্ষা দেয় যেন অফিস আদালতে কল কারখানা ফ্যাক্টরী রাষ্ট্র ভবনে সময়ের কাজ সময়ে করা যায়। সেহরী না খেয়ে কেউ রাতভর ঘুমিয়ে থাকলো এবং সকালে ওঠে যদি মনে করে রাতে কিছু খেতে পারলাম না, সময় পাইনি সকালে কিছু খেয়ে নেই তাহলে তা যেমন রোযা হবে না তদ্রুপ অনেক এমন আছেন যারা যৌবনকালে ইবাদত বন্দেগী নামাজ, রোযা হজ্জ যাকাত কোন কাজই করে না শেষ বয়সে এসে মনে করেন চাকুরী, ব্যবসা সব বাদ দিয়ে শুধু ইবাদতে-ই খাটাব আসলে ঐসময় তিনি সংসারের বোঝা!! তার দ্বারা সমাজের ভাল মন্দ কোন কাজ করাই সম্ভব হয় না তখন বেছে নেন ইবাদতের পথ ! আসলে তখনকার ইবাদত অনেকাংশে রাতে সেহরী না খেয়ে সকালে কিছু খেয়ে রোযা রাখার মতই বিষয় !! যদি ও সকালে কিছু খেয়ে রোযা রাখার কোন সুযোগ ইসলামে নেই। মূল কথা সময়ের কাজ সময়ে করাই ইবাদত যা রোযার মাধ্যমে হৃদয়াঙ্গম করা সহজ।
৬. আল্লাহর ভালবাসা ও পুরস্কার লাভ : ইসলামে যতগুলো ইবাদত রয়েছে তার মধ্যে প্রায় সব ক’টিতে কিছুটা হলেও লোক দেখানোর সম্ভাবনা বা সুযোগ রয়েছে। কিন্তু রোযা এর সম্পূর্ণ বিপরীত।এতে লোক দেখানোর কোন সুযোগ নেই। তাই যারা আল্লাহর ভালবাসা ও পুরস্কার লাভের আশা-ই রোযা রাখবে তারা তাই পাবে। হাদিসে কুদসীতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “রোযা একমাত্র আমারই জন্য, আমি নিজে এর পুরস্কার দিব”।
৭. সহানুভূতি : রমযানুল মোবারক এর অপর নাম সহানুভূতির মাস। সামাজিক সহানুভূতির ক্ষেত্রে রোযার গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজে ধনী গরীব, অন্ধ খোড়া প্রতিবন্ধী ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের লোক বাস করে। ধনী ব্যক্তিরা সারাদিন রোযা রাখার ফলে উপবাস যাপনের কারণে গরীব দুঃখীদের কষ্ট বেদনা উপলব্ধি করতে পারে। ফলে তাদের সাহায্য সহানুভূতির হাত প্রশস্ত হয়। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “ এ মাস সহানুভূতির মাস”। সম্পদ হতে যাকাত আদায় করে সম্পদ ও আত্মার পবিত্রতা লাভ করার ইহাই হচ্ছে উত্তম উপায়। অবশ্য রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকাত আদায় করতে পারলে বছরে শত হাজার কোটি টাকা যাকাত আদায় হবে যা দ্বারা বেকারত্ব দূর করা সম্ভব নতুন নতুন দেশীয় শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব ।
৮. সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব : মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। এ মাসে বয়ঃপ্রাপ্ত সকলেই সিয়াম সাধনা করেন। সন্ধ্যায় ইফতার, ভোর রাতে সেহরি খায় এবং মাসের শেষে একই কাতারে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্যে দিয়ে মুসলমানদের সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে নবায়ন ও আরো সুদৃঢ় করা হয় যা সারা বছর লালন করলে ঐক্য ও সাম্য মজবুত হয় ।
৯. দারিদ্র্য বিমোচন: দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধন শেষে ঈদুল ফিতরের দিন ধনী ব্যক্তিরা তাদের ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে দরিদ্র অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর লক্ষ্যে তারা ফিতরা, যাকাত আদায় করে থাকে। এই যাকাত, ফিতরা যদি পুরোপুরি হিসাব নিকাসের মাধ্যমে আদায় হতো তাহলে এ দেশে কোন দরিদ্র লোক খুঁজেই পাওয়া যেত না। অথচ নামকা ওয়াস্তে কেউ কেউ কিছু কাপড় শাড়ী লুঙ্গী দিয়ে থাকেন ঢাক ঢোল বাজিয়ে যা গ্রহণ করতে গিয়ে ভীড়ের চাপে অনেকে মারা যান। তাই সরকারি উদ্যোগে যাকাত আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও নীতিমালা দরকার যেন যাকাত অনাদায়ে রাষ্ট্রীয় শাস্তির সম্মুখীন হতে হয় ।
১০. আদর্শ সমাজ গঠন : মারামারি, কাটাকাটি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, গীবত, চোগলখোরী, বাক বিতন্ডা, মিথ্যা অপবাদ, মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন জবর দখল ইত্যাদি অমানবিক অসামাজিক অপকর্মের দ্বারা একটি সুশীল সমাজ অশান্তির আগুনে দাউ দাউ করে জ¦লে পুড়ে শেষ হয়ে যায়। সরকার তার গোয়েন্দা সংস্থা বিভিন্ন বাহিনী নিয়োগ করে ও এসব অপকর্ম হতে দেশ সমাজকে শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারে না কিন্তু রমযানের সিয়াম সাধনের মাধ্যমে সমাজ হতে এসব অপকর্ম সমূলে বিলীন করা সম্ভব এটিই সত্য ও বাস্তব তাই সকলের উচিৎ রমযানের সিয়াম সাধনে পরস্পর পরস্পরকে সার্বিক সহযোগিতা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো বাজার স্থিতিশীল রাখা, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি রোযাদারদের অনুকূলে রেখে উল্লেখিত বিষয়াবলী নিশ্চিত করে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করা।
Leave a Reply