♥গল্প♥
♥♥♥
কোন রকম বাসায় আসে অয়নন্দিতা । দরজায় নক করতেই রোকেয়া বেগম দরজা খুলেন । তার মুখ দেখে অয়নন্দিতা
বুঝতে পারছে না আবহাওয়া গরম নাকি ঠান্ডা নাকি নাতিশীতোষ্ণ । কিছু না বলে বাসার ভেতর যায় অয়নন্দিতা । বাসায় ঢুকেই অবাক সে । ড্রইং রুম প্রায় ভর্তি জিনিসপত্রে । সাথে একজন ভদ্রলোক এবং একজন ভদ্রমহিলা বসা । অয়নন্দিতার মাথায় বাজ পড়ার মত অবস্থা । সোফার এক পাশে তার বাবা হামিদ সাহেব এবং ভাই অয়ন বসা । রোকেয়া বেগম পেছন থেকে এসে অয়নন্দিতাকে ধরে ওই দুইজন মানুষের উদ্দেশ্যে বলে ,
রোকেয়া বেগম বলার পর পরই ওই ভদ্রমহিলা এসে অয়নন্দিতাকে জড়িয়ে ধরেন । কপালে চুমু খেয়ে নিয়ে বলেন ,
ভদ্রমহিলার কথা শুনে অয়নন্দিতা একবার তাকায় মায়ের দিকে আবার তাকায় বাবা , ভাইয়ের দিকে । অয়নন্দিতার তাকানো দেখে রোকেয়া বেগম বুঝে যান মেয়ের মনে কি প্রশ্ন চলছে । তখন তিনিই অয়নন্দিতার না বলা প্রশ্নের জবাব দিয়ে দেন ,
মায়ের কথা শুনে যেন মাথায় বাজ পড়ে অয়নন্দিতার । কিছুই বুঝতে পারছে না সে । কি বলবে না বলবে । এইভাবে হুট করে বিয়ের প্রস্তাব । কারা ওনারা ? পরিচয় কি ? কিছুই জানে না সে । হঠাৎ করেই ফারহানের চিঠির কথা মনে পড়ে যায় তার । তবে কি ওনারা ? এরই মাঝে ভদ্রমহিলা অয়নন্দিতার হাত ধরে নিয়ে তাদের কাছে বসান ।
ব্যাস , সব কিছু বুঝে যায় অয়নন্দিতা । যা ভেবেছিল সে । ফারহান তার বাবা মা পাঠিয়ে দিয়েছেন অয়নন্দিতার বাসায় । অয়নন্দিতা তখন অয়ন আর তার ছোট বোন ফারুর দিকে তাকায় । ভাইয়ের হাত জড়িয়ে রেখে ফারু অয়নন্দিতাকে চোখ মারে আর মুচকি মুচকি হাসে আর অয়ন সেও হাসে তবে মুচকি হাসি । বাবা হামিদ সাহেবের চোখে মুখে স্বস্তির নিশ্বাস । যেন তিনি চিন্তা মুক্ত হলেন ।
অয়নন্দিতার বাসার সোফায় বসে থাকা ভদ্রলোক হলেন , জনাব রমজান শেখ এবং ভদ্রমহিলা হলেন , রওশন বেগম । যারা ফারহানের পিতা-মাতা ।
অয়নন্দিতা এতটাই অবাক যে তার মুখ থেকে কথাই বের হচ্ছে না । অন্যদিকে , রওশন বেগম , তিনি যেন বউ না স্বর্নের টুকরো পেয়েছেন । একবার জড়িয়ে ধরছেন আবার মাথায় হাত বুলাচ্ছেন আবার চুমু দিচ্ছেন কপালে । রওশন বেগমের এমন আচরণ দেখে অয়নন্দিতার মা বাবা ভাই বোন সবাই অবাক । এত বড়লোক মানুষ এতটা ভালো কি করে হয় ? রওশন বেগম তখনই অয়নন্দিতার গলায় চেইন , হাতে বালা , আঙ্গুলে আংটি পরিয়ে দেন । অয়নন্দিতার বাবা এবং মাকে রমজান শেখ বলেন ,
রমজান শেখের অমায়িক ব্যবহার দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় সবাই । এত ভালো ব্যবহার করছেন । অথচ এই লোকের কত টাকা এই লোক নিজেও জানে না । রমজান শেখের কথার জবাবে হামিদ সাহেব বলেন ,
অল্প সময়ের মাঝে অনেক প্রিপারেশন করেছেন অয়নন্দিতার পরিবার । সবটা খান নি তারা । এরই মাঝে রমজান শেখের চোখ যায় অয়নের দিকে ।
অয়নের এমন কথা শুনে রমজান শেখ সাথে রওশন বেগম অবাক হয়ে যায় । অনেক শান্ত এবং ভদ্র ছেলে অয়ন । যে কেউ প্রথম দেখায় পছন্দ করবে এই ছেলেকে । ভাই বোন এক রকম । অয়নন্দিতা আর অয়ন প্রায় অনেকটাই এক রকম । এদের দুজন থেকে একটু আলাদা হচ্ছে ফারু ।
মোটামুটি সব কথা শেষ করে তারা বিদায় নেয় । যাওয়ার সময় অয়নন্দিতাও মায়ের ইশারায় রওশন বেগম এবং রমজান শেখকে সালাম করে নেয় । তারা বের হতে হতে মাগরিবের পর হয় । অয়নন্দিতাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নামাজ শেষ করে নেয় । ওড়না টা খুলে মাথার চুল আচড়ানোর জন্যে ড্রেসিং টেবিলের সামনে যায় অয়নন্দিতা । আয়নায় গলার চেইন টা দেখা যাচ্ছে । জ্বল জ্বল করছে , সেই সাথে হাতের চুড়ি গুলো আর আংটি টাও চোখে পড়ে তার ।
নিজের সাথে কথা বলার মাঝে মোবাইলে ফোন বেজে ওঠে তার । আননোন নাম্বার তাই রিসিভ করে নি সে । কয়েকবার বাজার পর ফোন রিসিভ করে অয়নন্দিতা ।
ফারহানের কন্ঠস্বর শুনে থতমত খেয়ে যায় অয়নন্দিতা । ফারহান তার মোবাইল নাম্বার পেলো কি করে ? পরে ভাবে নাম্বার পাওয়া এ আর এমন কি কাজ । যেই লোক আমার সব দিক খেয়াল করে তার নাম্বার পাওয়া এত কঠিন না । এক ধমক দিয়ে সে ফারহানকে বলে ,
কেউ কারো ক্ষতি করলেই যদি বিয়ে করে তাহলে আমার এখন পর্যন্ত ১০০+ বউ হতো । মেয়ে বউ সাথে ছেলে বউ , বুঝলা ?
ছেলে বউ কথাটা শুনে অয়নন্দিতা ফিক করে হেসে দেয় । হেসে দিয়ে আবার হাসিটা ভেতরে ঢুকিয়ে নেয় সে ।
কিন্তু অয়নন্দিতার এইসব কিছু বিষের মত লাগছে । ফারহানকে যাষ্ট বিরক্ত লাগছে এখন তার । তবুও কিছুই করার নেই । টুকটাক কথা বলে ফোন রেখে দেয় অয়নন্দিতা ।
এদিকে অয়নন্দিতার বিরক্তিতা দেখে ওদিকে ফারহান বেশ মজা নিচ্ছে । তার মস্তিষ্কে এখন কি খেলা ঘুরপাক খাচ্ছে কেবল সেই-ই জানে
চলবে………………………..
লেখকঃ জান্নাতুল ফেরদৌস
Leave a Reply