♥গল্প♥
♥♥♥
দিন যাচ্ছে বিয়ের তারিখও এগুচ্ছে । সবাই ব্যস্ত । নিজের বোনের বিয়েতে কোন কমতি রাখবে না অয়ন । বড় ভাই হিসেবে যতটা করা প্রয়োজন তার চাইতেও বেশি করবে সে । পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে তার সবটুকু কর্তব্য পালন করবে সে ।
অন্যদিকে হামিদ সাহেব তারও কিছু জমা পুজি ছিল যা তিনি তার দুই মেয়ের জন্যে রেখেছিলেন ৷ সেখান থেকে কিছুটা খরচ করবেন তিনি । তবে হামিদ সাহেব বরাবর নিশ্চিন্ত থেকে এসেছেন । কারণ তার কাঁধের ওপর তার ছেলের হাত আছে । তিনি গর্ব করেন অনেক সময় তার ছেলের জন্য । কারণ অয়নের বয়সের ছেলেরা পার্টি করে টাকা পয়সা উড়ায় আর সে জায়গায় তার ছেলে নিজের দায়িত্বটুকু বুঝে নিয়েছে অতি সহজেই ।
একদিক থেকে হামিদ সাহেবের ছেলে আর মেয়ে জামাই অনেকটাই এক রকম । দুজনেই নিজ দায়িত্বে নির্ভর ।
আজ বাদে কাল অয়নির গায়ে হলুদ । টুকটাক শপিং সবই করা শেষ । আআত্মীয়স্বজনরা এক এক করে সবাই এসে গেছেন কেউ কেউ এখনও আসছেন । হামিদ সাহেবের পরিবারের প্রথম বিয়ে বলে কথা । হাসি আনন্দ হবে এটাই সবার কাম্য ।
কিন্তু এই সবের মাঝেও অয়নন্দিতা , বেশিরভাগ সময় চিন্তিত থাকে । কি আছে তার কপালে । ফারহান যে তাক্র সর্বদিক থেকে আটকে দিয়েছে । সে কিছু বলার আগেই ফারহান সিচুয়েশানটা এমন ভাবে ক্রিয়েট করে দিয়েছে যে অয়নন্দিতা চাইলেও বিয়েটা ভেঙে দিতে পারছে না । ফারহানের মতিগতি বুঝা বড় দায় । কি চায় সে ? কেন এই বিয়ে ? বার বার ক্ষমা চেয়েছিল সে , তবুও কিসের জন্যে এই বিয়ে ? কিছুই তার মস্তিষ্কে আসছে না । একটা নির্মম অসহায়ত্বের মাঝে বিচরণ করছে সে ।
অয়ন এক সপ্তাহের জন্যে ছুটি নিয়েছে অফিস থেকে । গতকাল ফারহানের সাথে দেখা হয়েছে তার । হামিদ সাহেব এবং সে গিয়েছিল ফারহানদের বাড়িতে । বউভাতের দিন ফারহান যেই পোশাক পরবে তা এই বাড়ি থেকেই দেয়া হবে । অয়নের চয়েজ বরাবরই ভালো । তাই সে নিজেই চুজ করে কিনে নিয়ে যায় ফারহানের জন্যে । ফারহানের সাথে দেখা হওয়ার পর বুঝতে পেরেছে যে সে আর ফারহান বয়সের দিক থেকে প্রায় অনেকটাই সমবয়সী । এক মাসের আগ-পিছ তাদের মাঝে । তাই ফারহানও নাম ধরর ডেকেছে আর অয়নও তাই করেছে । বোনের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে অনেকটাই চিন্তামুক্ত সে । বোন তার ভালো ঘরে যাচ্ছে এটাই অনেক । এরই মাঝে অয়নের ফোন বেজে উঠে । সবার সামনে কথা বলতে পারবে না তাই উঠে গিয়ে বারান্দায় যায় অয়ন ।
ফারহানের বাড়ি থেকে বিয়ের কনের জন্য তত্ত্ব এসেছে । অয়নন্দিতার বাড়ির লোকজন সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে তত্ত্ব গুলো খুলছে । অয়নন্দিতা না চাইতেও সবাই তাকে সেখানে জোর করিয়ে বসিয়ে রাখে । তাদের সবার কথা হচ্ছে অয়নন্দিতার শ্বশুরবাড়ি থেকে অয়নন্দিতার জন্যে তত্ত্ব এসেছে আর সে দেখবে না এটা কি করে হয় , তাই এইভাবে বসিয়ে রাখে তাকে ।
অয়নন্দিতার বড় চাচি বিয়ের শাড়ির বক্স টা খুলে মোটামুটি বেশ বড় রকমের একটা ধাক্কা খান । বড় চাচির এইভাবে থমকে যাওয়া দেখে অয়নন্দিতা বুঝে যায় গড় বড় হয়েছে । বড় চাচির থমকে যাওয়া দেখে সবাই একত্রে তার কাছে যায় । অয়নন্দিতা সেইখানে গিয়ে দেখে , যা মনে মনে ভেবেছিল সে । সেই কেয়ামতের আলামত শুরু হয়ে গেছে বিয়ের শাড়ি দিয়েই ।
বিয়ের লেহেঙ্গাটা দেখে অয়নন্দিতা অনেকটা ঘাবড়ে যায় । পুরো লেহেঙ্গাটা সাদা । সাদার মাঝে গোল্ডেন জরি সূতার কাজ আর কিছু স্টোন বসানো আছে । জোরাটা শুধু লাল রঙের । এটা নিয়ে সবার মাঝে গুঞ্জন শুনা যায় । সবার সাথে আলাপ আলোচনা করে অয়নন্দিতার বড় চাচি ফোন করে ফারহানের মাকে মানে রওশন বেগমকে ।
ফোন রেখে সবাইকে বিষয় টা খুলে বলে সবাই বুঝলেও অয়নন্দিতার এই ব্যাপারটা ঘাপলা লাগে । সে বলেছিল বিয়ে নাকি ইউনিক স্টাইলে করবে তবে কি এটাই ছিল ইউনিক স্টাইল । এইসব ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে চলে যায় অয়নন্দিতা ।
অয়নন্দিতা রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় । ভাবছে আগামী দিন গুলোর কথা । কিভাবে কাটবে তার দিন গুলো ? সে ভালো থাকবে তো ? এই ফারহান কি মতলব আটছে সে নিজেই জানে ।
অয়নন্দিতায় ভাবনায় ছেদ পড়ে ফারহানের মেসেজে । মেসেজ টোন বেজে উঠতেই অয়নন্দিতা মোবাইলের দিকে তাকায় । ফারহানের নাম্বার টা দেখা যাচ্ছে । তার মানে ফারহানই মেসেজ দিয়েছে । মেসেজে কি লিখেছে তা দেখার জন্য মেসেজ বক্সে যায় সে । চোখ পড়ে মেসেজে । বেশ বড় সড় মেসেজ । যেখানে লিখা আছে ,
বলেছিলাম বিয়েটা ইউনিক স্টাইলে হবে , করে দিলাম তো ইউনিক । সবাই পরে লাল বেনারসি আর তুমি পরবে সাদা লেহেঙ্গা । সবাই হা হয়ে চেয়ে থাকবে তোমার দিকে । ভাববে ফারহান শেখ যেমন ইউনিক তার বউয়েরও স্টাইলও তেমন ইউনিক । তুমি বেশ অবাক হয়ছো হয়তো । এমন অনেক কিছুই থাকবে সামনে যাতে তুমি শুধু অবাক হবে । ফারহান শেখের লক্ষী বউ হবে তুমি । তোমার সব কিছুই হবে ইউনিক স্টাইলে । ভালো থাকো , আর হ্যাঁ গায়ে হলুদ বেশি করে মাখবে । শুনেছি হলুদ দিলে মেয়েদের নাকি রুপ বেয়ে বেয়ে পড়ে ।
বাসর রাতে চেক করবো তোমার রুপ কতটা বেয়ে বেয়ে পড়ে ।
ইতি ,
তোমার নবাবজাদা ।।
মেসেজটা পড়ে এক অজানা ভয় যেন আরও চেপে ধরে অয়নন্দিতাকে । এই বিয়েটা করে ফারহান শেখ হয়তো অনেক ভয়ানক খেলায় মেতে উঠবেন । এইসবই অয়নন্দিতার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে । হয়তো তার কপালে অনেক দুঃখ অপেক্ষা করে আছে ।
নিজে নিজে এইসব কথা গুলো ভেবে যাচ্ছে সে । মাথার প্রতিটা শিরা উপশিরা ব্যাথায় ফেটে যাচ্ছে তার । একবার ভাবছে ফারহানের সাথে কথা বলবে , আবার ভাবে কথা বলেই বা কি লাভ ? তার প্রচুর ক্ষমতা , অয়নন্দিতা একা কিছুই করে উঠতে পারবে না । সব কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নেয় ,
চলবে………………………………
লেখক জান্নাতুল ফেরদৌস
Leave a Reply