নভেল করোনাভাইরাসের কারণে অন্তত ১০টি দেশ থেকে ২৮ হাজার ৪৬৩ বাংলাদেশীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। এছাড়া পাঁচ হাজার বাংলাদেশী এরই মধ্যে দেশে ফিরে এসেছেন। অন্যদিকে আগামী ৮ জুনের মধ্যে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে আরো ২ হাজার ৭৪৫ জনকে। এছাড়া মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে নিজ নিজ দেশে ফিরেছেন ৯ হাজার ৯৬৪ জন বিদেশী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে কভিড-১৯ মহামারী চলাকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মহামারী চলাকালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশীদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থাসহ বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়। চলমান সংক্রমণ পরিস্থিতিতে উদ্ভূত নতুন প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সমন্বয় করে কীভাবে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নির্বাহ করা যায়, বৈঠকে সে রূপরেখাও উপস্থাপন করা হয়।
বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৬ মে পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ৪ হাজার ১০৯ জন প্রবাসী ফেরত এসেছেন। তাদের মধ্যে বাহরাইন থেকে ফেরত এসেছেন ৩৩১ জন, কুয়েত থেকে ১ হাজার ১৪৬, সৌদি আরব থেকে ৩০৯, মালদ্বীপ থেকে ৪৬৮, ওমান থেকে ১ হাজার ৪৮, সিঙ্গাপুর থেকে ২৭৩ ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে ৫৩৪ জন। এছাড়া ১৭ মে কুয়েত থেকে ৩০০ জন, ইউএই থেকে ২০০ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৪৭ জন দেশে ফিরেছেন। ইউএই থেকে ২২৫ জন ফেরত এসেছেন গতকাল।
এছাড়া আজ ইউএই থেকে আরো ১৮৫ জনের ফেরত আসার কথা রয়েছে। ২১ মে ইউএই থেকে ১৯০ ও কুয়েত থেকে ৩০০ বাংলাদেশী দেশে ফিরে আসবেন। পরদিন ২২ মে কানাডা থেকে ফিরবেন ৩০০ জনের বেশি, যাদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। ২৬ মে কুয়েত থেকে ১৮০ জন ফিরবেন। এছাড়া ২৭ মে ৩০০ জন, ৩০ মে ১৮০, ১ জুন ১৮০, ৪ জুন ১৮০, ৫ জুন ১৮০ ও ৮ জুন ১৮০ জন বাংলাদেশী দেশে ফিরে আসছেন।
এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন বিদেশীও এ সময় তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত গিয়েছেন। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করে তাতে বলা হয়েছে, ১৬ মে পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২৯ জন বিদেশী বাংলাদেশ থেকে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত চলে গিয়েছেন।
সব মিলিয়ে ফেরত আসার তালিকায় নাম রয়েছে মোট ২৮ হাজার ৪৬৩ জনের। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যককে ফিরিয়ে আনা হবে সৌদি আরব থেকে। দেশটি থেকে মোট ফিরিয়ে আনা হচ্ছে ৭ হাজার ৪২৮ জনকে। যাদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে, তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ বিদেশে অবস্থান করছিলেন ‘আনডকুমেন্টেড’ বা অবৈধ হিসেবে।
এ বিষয়ে প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) পরিচালক ড. সি আর আবরার বণিক বার্তাকে বলেন, প্রবাসী কর্মীরা যদি স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন এবং দুই পক্ষের সরকার সুযোগ তৈরি করে দিয়ে তাদের ফেরত নিয়ে আসে, তাহলে তা সাধুবাদ পাওয়ার মতো ঘটনা। আর যদি বলা হয় তারা ‘আনডকুমেন্টেড’ ছিল, তাহলে কেন ‘আনডকুমেন্টেড’ ছিল সেটি সেসব দেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সমাধানে পৌঁছতে হবে। এসব দেশে কর্মীরা বৈধ প্রক্রিয়ায় গিয়ে কেন অবৈধ হয়ে গেল, আর সে দায়িত্ব কেন আমরা নেব, সে বিষয়টিও দেখতে হবে। আর যদি যৌক্তিক কারণ থাকে, সরকার যদি সেসব দেশের দাবির সঙ্গে একমত হয়, আর কর্মীরাও যদি ফিরতে আগ্রহী হন, তাহলে দুই দেশের আলোচনার ভিত্তিতে তাদের ফেরত আনা যেতে পারে।
Leave a Reply