♥গল্প♥
♥♥♥
বাসর ঘরে বসে আছে অয়নন্দিতা । ফ্রেশ হওয়ার পরেও মাথা তার প্রচন্ডরকম ঘুরছে । একটু ঘুমাতে পারলে ভালো হতো । কেন জানি তার সব কিছু ওলটপালট লাগছে । কয়েকদিন আগেও যেই ফারহানকে সে কোনদিন দেখেও নি এমন কি চিনেও নি আজ সেই ফারহানের বউ সে । ব্যাপার গুলো সম্পূর্ণ গোলমেলে আর অদ্ভুত লাগছে তার কাছে ।
দুচোখ ঘুমে ভেঙে যাচ্ছে । কিন্তু ভয়ে শুতেও পারছে না সে । মনের মাঝে তার হাজারটা ভয় ঘুরপাক খাচ্ছে ।
- আমি ঘুমিয়ে গেলে যদি আমায় মেরে ফেলে তখন কি হবে ?
আমি ঘুমিয়ে গেলে যদি আমার সাথে উলটাপালটা কিছু করে ?
নাহ নাহ , ঘুমানো যাবে না । একেবারেই ঘুমানো যাবে না । যেই বেয়াদব লোক সে , বলা তো যায় না করলেও করতে পারে কিছু উলটাপালটা ।
কয়েক সেকেন্ডের মাথায় অয়নন্দিতার সব ঘুম তুঙ্গে উঠে যায় । অয়নন্দিতা ঘাড় ঘুরিয়ে পুরো রুম টা এক নজর দেখে । বেশ বড় সড় রুমটা । ভালোই জিনিসপত্র আছে রুমে । মনে মনে ভাবে , এটা তো বাংলোর রুমের মতই । টেবিল ল্যাম্পের পাশেই ফারহানের একটা ছবি রাখা আছে , ছবিটার দিকে নজর যায় অয়নন্দিতার । বেশ ভালো মত চেয়ে আছে সে ছবিটার দিকে । ছবিটায় তাকে বেশ হ্যান্ডসাম লাগছিল কিন্তু কে বলবে , এই হ্যান্ডসাম লোকের পেছনে একটা রহস্যময় ক্যারেক্টার আছে । ঘড়িতে নজর দিতেই দেখে ঘড়িতে প্রায় ১২ টা বেজে গেছে অথচ এই লোক এখনও রুমেই আসে নি ।
হুট করেই ফারহান রুমে আসে । ফারহানের রুমে আসাটা অয়নন্দিতার কাছে একটা বিরক্তিকর মুহুর্ত ছাড়া আর কিছুই না । ফারহান রুমে এসে মোবাইল আর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে কাবার্ড থেকে জামাকাপড় বের করে । ওয়াসরুমে যাওয়ার আগে পেছন ফিরে অয়নন্দিতার দিকে তাকায় সে ,
ফারহানের এমন কথায় নড়ে উঠে সে । মাথা তুলে তার দিকে তাকায় অয়নন্দিতা । অয়নন্দিতার চাহনিটা দেখে ফারহান আরও নরম স্বরে বলে উঠে ,
- ঘুমিয়ে যাবে ?
- কেন ?
- ঘুমিয়ে গেলে ঘুমিয়ে যেতে পারো আর যদি সজাগ থাকো তবে অপেক্ষা করো । কিছু কথা আছে আমার তোমার সাথে । আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর বলবো ।
এই বলে ফারহান ওয়াসরুমে ঢুকে যায় । ফারহান কি বলবে এটা ভেবে অয়নন্দিতার চোখের ঘুম টাও উবে যায় । আবার এটাও ভাবে , ” কাহিনী কি এত ঠান্ডা মেজাজ কেন ? ঝড়ের পূর্বাভাস নয় তো ? ” ইতোমধ্যে ফারহানও ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে আসে । অয়নন্দিতাকে খাটের উপর বসে থাকতে দেখে একটু অবাক হয় সে । ভেবেছিল এসে দেখবে অয়নন্দিতা ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু বিপরীত হওয়াতে একটু ধাক্কা খায় ফারহান ।
ফারহান অয়নন্দিতার সামনে গিয়ে বসে । আর ফারহানের এইভাবে বসা অয়নন্দিতার বুকে কামড় বসিয়ে দেয় । পুরো শরীর খিচে বসে আছে সে যা ফারহান সহজেই বুঝে যায় । হালকা মুচকি হেসে দিয়ে বলে ,
- এখানে ভালো না লাগলে বারান্দায় বসতে পারো ।
ফারহান তার কথার উত্তর না পেয়ে অয়নন্দিতার দিকে তাকিয়ে থাকে । অয়নন্দিতা যে তার উপর বিরক্ত এটা অয়নন্দিতার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ।
- অয়নন্দিতা আমি কথা একটা একবার বলি , দ্বিতীয়বার আর সেটা রিপিট করি না । আমার সাথে আজকের পর থেকে কথা বলতে হলে আমি যা বলবো তার সাথে সাথে তোমায় রিপ্লাই করতে হবে বলে দিলাম ।
- যদি না দেই ?
- মেরে হাত পা ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো । আমি বেয়াদবী একদম পছন্দ করি না । বুঝা গেছে ?
- হ্যাঁ , কেমন বউ আমি আর কেমন বর আমার যে প্রথম রাতে মেরে হাত পা ভেঙে দেয়ার কথা বলে ।
অয়নন্দিতার কথায় ফারহান হেসে দেয় । তারপর বলতে শুরু করে ,
- এই বোকা মেয়ে , সব সময় কি আর মারবো ?
- আপনার বাবা কি আপনার মাকে কথায় কথায় মারে ?
- কখনোই না , বাবার সাহসও নেই ।
- তবে আপনার সাহস হয় কিভাবে আমাকে মারবেন ?
অয়নন্দিতা কিসের সাথে কি মিলিয়ে ফারহানকে কথা দিয়ে কাত করে দিলো ফারহান বুঝতেও পারেনি । আর যখন বুঝতে পেরেছে তখন সে কি উত্তর দিবে ভাবছে ।
অয়নন্দিতার কথায় কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ফারহান বলে ,
- আমি মারবো , হয়েছে ?
- হ্যাঁ , ভালো ।
- আচ্ছা , এখন বলো এখানে বসবে নাকি বারান্দায় ।
- কি এমন কথা আছে যে বলবেন আমাকে ?
- থাকতেই পারে ।
- তাহলে বলেও ফেলুন ।
- চলো বারান্দায় বসি ?
ফারহানের এমন নরম আচরণে অয়নন্দিতাও গলে যায় । ফারহান আচমকাই অয়নন্দিতার হাতটা ধরে নেয় তারপর টেনে বারান্দায় নিয়ে যায় । বারান্দায় থাকা বেতের চেয়ারে নিজেও বসে সাথে অয়নন্দিতাকেও বসায় ।
ফারহান অয়নন্দিতার সামনে সোজা হয়ে বসে সেই সাথে নিজেকেও স্ট্রং করে কিছু বলার জন্যে । অয়নন্দিতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর ফারহানকে উদ্দেশ্য করে বলে ,
- বলুন কি বলবেন ? আমার ঘুম পাচ্ছে ।
- খুব বিরক্ত হচ্ছো নাকি ?
-…………………. - আমি কিছু কথা বলবো তোমাকে মনযোগ সহকারে শুনবে ।
- বলুন ।
ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে ফারহান তার হাতটা অয়নন্দিতার হাতে রাখে , নিজের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে ধরে অয়নন্দিতার শান্ত চোখের দৃষ্টিতে । তারপর ঠান্ডা মাথায় নরম স্বরে শুরু করে ,
- প্রথমত , আমায় আপনি আজ্ঞে করবা না । তুমি করে বলতে হবে । তুমি মানে তুমি , এই তুমি শব্দটা সারাজীবন আমি তোমার মুখে আমার জন্যে শুনতে চাই । আমাদের মাঝে যদি কখনও ঝগড়াও হয় তখন সো কলড মেয়েদের মত আমায় আপনি আজ্ঞে করবে না । তুমি করেই বলবে ঝগড়া করলেও তুমি করেই বলবে , বুঝেছো ?
অয়নন্দিতা এক নজরে ফারহানের দিকে চেয়ে আছে । মানুষটা অদ্ভুত রকম চরিত্রের । এই চরিত্রটা সে বুঝে উঠতে পারে না । তবুও ফারহানের কথার উপর ভিত্তি করে উত্তর দেয় সে ,
অয়নন্দিতার জবাব পেয়ে একটা মুগ্ধ হাসি দেয় ফারহান তারপর আবার বলে ,
- দ্বিতীয়ত , তোমার মনের ভাবনা গুলো হয়তো বার বার তোমায় গ্রাস করছে যে আমি কেন তোমায় বিয়ে করে নিলাম তাও এত কম সময়ের মাঝে । হয়তো এটাই ভাবছো যে , আমি তোমার উপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে তোমায় বিয়ে করেছি । তবে বলবো এটা তোমার ভুল ধারণা , হ্যাঁ এটা পুরোপুরি তোমার ভুল ধারণা অয়নন্দিতা । অয়নন্দিতা , জীবনটা সিরিয়াল কিংবা নাটক নয় । কিংবা হিন্দি অথবা বাংলা সিনেমার নাটকীয়তা নয় । তবে হ্যাঁ , কিছু কিছু ক্ষেত্রে জীবনে সিনেমার চাইতেও অতিরিক্ত নাটকীয়তা এসে যায় । কি বলেছি এতক্ষণ আশা করি বুঝতে পেরেছো ?
অয়নন্দিতা এ যেন অন্য কাউকে দেখছে । এ মানুষটার কথা এমনও হতে পারে জান ছিল না অয়নন্দিতার । এখন এই মুহুর্তে ফারহানকে প্রশ্ন করতে মন চাইছে তবে এই বিয়েটা কেন । প্রশ্নটা মনে না রেখে সরাসরি বলে ফেলে সে । তবে এইবার তার স্বরটা আরও ছোট হয়ে যায় সেই সাথে ঘাড়টাও নিচু হয়ে যায় ।
- তবে আমায় এইভাবে বিয়ে করার কারণ কি ?
ফারহান তখন সিগারেটে আগুন জ্বালিয়ে এক টান দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া গুলো সামনের দিকে মুখ দিয়ে ছাড়ে তারপর বলে ,
- অয়নন্দিতা আমার সাথে কথা বলার সময় টিপিক্যাল মেয়েদের মত ঘাড় নিচু করবে না । ফারহান শেখের বউ তুমি , আর তোমার আচার আচরণটাও থাকবে তেমন । তুমি ঘাড় নিচু করলেই আমি দুর্বল হয়ে পড়ি , আমায় প্লিজ দুর্বল করে দিও না । এইবার বলি তোমাকে বিয়ে করার কারণ , প্রথম যেদিন তোমায় দেখি তোমাকে বেশ মনে ধরেছে আমার । তোমার আচরণ টায় বেশ অবাক হয়েছিলাম আমি । কোন মেয়ে এই প্রথমবার ফারহান শেখের সাথে টক্কর দিতে পেরেছে । আর রাজুর বউভাতের অনুষ্ঠানের রাতে তোমার সাথে ওই আচরণটা করেছিলাম ইচ্ছে করেই , যাতে তুমি বুঝতে পারো আমি কেমন মানুষ । তবে তুমি যে আমার ক্লাইন্ট অবদি পৌঁছে যাবে আর আমার নামে এত ঝুঁড়ি ঝুঁড়ি মিথ্যা বলবে তা জানা ছিল না । বিশ্বাস করো যখন জানতে পারলাম তুমি এইসবের জন্য দায়ী , খোদার কসম খুন করতে ইচ্ছে হচ্ছিল তোমায় কিন্তু পরক্ষনেই পিঠের ওই তিলটার প্রেমে পড়ে গেছি আমি যার কারণে সেদিন তোমায় আমার বাংলো অবদি টেনে নিয়ে গেছি ।
- সেদিন আমার সাথে এত খারাপ আচরণ করেছেন কেন তবে ?
- খারাপ আচরণ করি নি তো ।
- করেছেন তো , কি কি বলেছেন ভুলে গেছেন ? আর আমার ওড়না টা ,,,,,
- হা হা , ওটা করে তোমার শরীরে আমার ছাপ বসিয়ে দিয়েছিলাম যাতে দিন রাত তোমার মস্তিষ্ক শুধু আমায় নিয়ে ভাবে আর আমার খেয়ালই আনে । আমি জানতাম তুমি আসবে আমার কাছে , কারণ মেয়েদের psychology আমার খুব ভালো মত জানা আছে । আর যেদিন এলে আমার কাছে সেদিনই তোমাকে বউ করার কথা বলে চমকে দিয়েছিলাম । ভয়ে পেয়েছিলে অনেক ? আর হ্যাঁ সেদিন যেই কাজ গুলো করিয়েছিলাম তা ইচ্ছে করেই করেছি যাতে তুমি আমার উপর অনেক রাগ করো । সেদিন রাতেই বাড়ি ফিরে বাবা আর মাকে তোমার বাসার ঠিকানা দিয়ে বলেছিলাম , কিছুই শুনতে চাই না এই মেয়েই আমার বউ হয়ে এই বাড়িতে আসবে । মা তো আহ্লাদে আটখানা হয়ে বলেছে , তুই যেমন চাস তেমনি হবে । ব্যাস তারপর বিয়ে করে নিলাম তোমায় । মোট কথা কি জানো , তোমায় দেখার পর মনে হয়েছে তুমিই সেই নারী যার খোঁজ আমার ছিল । পেয়েছি তাই আর হাত ছাড়া করি নি ।
ফারহানের কথা গুলো শুনে অয়নন্দিতা পুরো স্তব্ধ হয়ে যায় । এত বড় ধাক্কা সে খাবে বিয়ের আগের দিন রাতেও ভাবে নি । ফারহান মানে তার বরকে নিয়ে যত ভাবনা ছিল সব ভুল প্রমাণিত হয়ে গেল , তাও এত সহজেই । অয়নন্দিতা এতটাই অবাক যে সে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে৷। মুখে কথা আসছে না তার । এরই মাঝে ফারহান আবার বলা শুরু করে ,
- প্রয়োজন নেই যে ভালোবেসে একে অপরকে বিয়ে করতে হয় । না ভালোবেসে বিয়ে করার মাঝে আলাদা মজা , কেমন জানো ? তবে শুনো , না চিনে না ভালোবেসে বিয়ে করলে একে অপরকে আস্তে আস্তে চেনা যায় , জানা যায় । জরুরী নয় যে ভালোবেসেই বিয়ে করতে হবে ।
অয়নন্দিতা এইবার আসি সব থেকে important কথায় , যা তোমায় জানিয়ে রাখা ভালো । আমার কিন্তু প্রচুর রাগ অয়নন্দিতা , একমাত্র আমার এই রাগের জন্য আমার ৫ টা গার্লফ্রেন্ড গেছে ।
অয়নন্দিতা পুরো দমে জমে গেছে ৫ টা গার্লফ্রেন্ড এর কথা শুনে ।
- ৫ টায়ায়ায়ায়ায়া
- অবাক হওয়ার কি আছে । হ্যাঁ ছিল আমার ৫ টা প্রেমিকা । তবে একটাও টিকে নি তার কারণ আমি আর আমার একমাত্র রাগ । আর শুনো আমায় অতিরিক্ত রাগাবে না বা আমি যখন রেগে থাকবো তখন তুমি আমার কাছে আসবে না , কারণ আমি যখন রেগে যাই আমার হিতাহিতজ্ঞান কাজ করে না । হাত উঠে যায় আমায় । ২ নাম্বারটাকে একদিন কষে লাগিয়ে ছিলাম । তারপর থেকে আর কথাই বলে নি । আমিও নাম্বার ডিলিট করে ফেলেছি । বাকি চারটা এমনি এমনিই গেছে । ৫ নাম্বারটা অবশ্য যেতে চায় নি ওটাকে আমিই ভাগিয়েছি । সারাদিন আমার কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান প্যান প্যান করতো । অসহ্য লেগে গিয়েছিল । শেষে বলেছিল বিয়ে করতে , করি নি ।
এইসব শুনে অয়নন্দিতার মাথা ঘুরিয়ে উঠে । কি বলছে ফারহান এইসব ? কোন পুরুষের ৫ টা গার্লফ্রেন্ড থাকে ? তারপর অনেকটা অভিমান নিয়েই অয়নন্দিতা বলে উঠে ,
- কেন , করেন বি কেন ? তাকেই বিয়ে করে নিতেন ?
- মাথা খারাপ নাকি , পাগলকে কে বিয়ে করে ?
- তাহলে , পাগলের সাথে কে প্রেম করেছে ?
- আমিই করেছি , তার মানে আমি পাগল নই । তখন ভালোই দেখেছিলাম কিন্তু আস্তে আস্তে খোলসের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসেছে । তবে মাইশা এখনও ফোন দেয় । মেজাজ খারাপ লাগে অনেক ।
- মাইশা ,,,,,,,,,,?
- ৩ নাম্বার জন , আরেক প্যাচওয়ালী মেয়ে সে । কথাকে এত প্যাচায় এত প্যাচায় যে আমার মাথার মগজ ধরে যেতো । অনেকটা বাচাল টাইপ আর কি ।
- ওহ ,
- আর হ্যাঁ , তুমি কথায় কথায় কাঁদবা না । আজকে মেজাজ টা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল আমার । মানুষ এত কাঁদতে পারে ?
- আমি এত কাঁদি না , ওকে ?
- হ্যাঁ আজকে তো তোমার সাথের জন কেঁদেছে ।
- বিয়ে হয়ে গেছে আমার তো আমি কাঁদবো না ?
- বিয়ে হয়ে গেলেই কি কাঁদতে হয় ?
- হু , হয় ।
- আচ্ছা এইবার আমার সব কথা তোমার এই মগজে ঢুকেছে ।
চুপ করে আছে অয়নন্দিতা । বাসর ঘরে এত এত ধাক্কা খেয়ে বেচারি হা হয়ে থাকে । ফারহান যে সবটা এইভাবে তার সামনে খুলে রাখবে সে ভাবেও নি ।
- আবারও ঘাড় টা নামিয়ে রেখেছো ? আমি তো দুর্বল হয়ে যাচ্ছি ।
- আমি ঘুমাবো ।
- তার আগে বলো তো , আমায় নিয়ে এই মুহুর্তে তোমার মনে ঠিক কেমন অনুভূতি হচ্ছে ?
- ছাতার মাথা টা হচ্ছে , যান তো,,,,,,,,,
এই বলে অয়নন্দিতা উঠে যেতে নিলেই ফারহান এক হাতে অয়নন্দিতার হাত ধরে টেনে এনে একেবারে নিজের কোলে বসিয়ে ফেলে । আচমকা টান খাওয়ায় একটু ভয় পেয়ে যায় অয়নন্দিতা । আর ফারহান অয়নন্দিতার গলা জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ধরে । নিজেকে এমন কারো আবদ্ধে পেয়েছে অয়নন্দিতা , যাকে তার একটু হলেও ভালো লাগতে শুরু হয়েছে । নিজের ব্যাপারে সমস্ত কথা গুলো অনায়াসে সব বলে দিল সে ।
- তোমাকে না বলেছি তুমি বলতে ।
তুমি করে বলো ।
- আমায় ছাড়ুন ।
- আগে তুমি বলো ?
- উহু ,
- কেন , তুমি বলতে হবে ।
- পারবো না ,
- কেন ?
- এখন হবে না ।
- হওয়ালেই তো হবে ।
- উফফফফ ,
- তুমি বলো , তুমি বলো , বলতে বলেছি ।
অয়নন্দিতার পিঠটা ফারহানের বুকের সাথে থাকায় অয়নন্দিতার পিঠের তিলটা সহজেই ফারহানের চোখে পড়ে । ফারহান যেন মুহুর্তেই attracted হয়ে যায় অয়নন্দিতার প্রতি । হাত দিয়ে আলতো করেই অয়নন্দিতার পিঠের তিলটা ছুয়ে দেয় সে । অন্যদিকে ফারহানের ছোয়ায় যেন অয়নন্দিতা নড়ে যায় । কাপা স্বরে বলে উঠে ,
- ফারহান প্লিজ , আমি ঘুমাবো ।
- ঘুমাতে চাও ?
- হ্যাঁ ,
ফারহান তখনই অয়নন্দিতাকে কোলে তুলে নেয় । সোজা রুমে নিয়ে গিয়ে ফুলে মোড়ানো খাটের এক পাশে শুইয়ে দেয় অয়নন্দিতাকে । তারপর অয়নন্দিতার কপালে হুট করেই আলতো করে চুমু খেয়ে বসে ফারহান । অয়নন্দিতার ওই মুহুর্তে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে । ফারহানের এইভাবে হুট করে চুমু দেয়ায় অয়নন্দিতা অনেক লজ্জা পেয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলে । তখন ফারহান বলে উঠে ,
- চোখ খুলতে পারো এখন । এতটা লজ্জা পেতে হবে না । আমি তোমার বর , সো আমার কাছে লজ্জা পেতে হবে না । আর হ্যাঁ বলেছিলাম না আমাদের বাসরটাও হবে ইউনিক , হলো তো ইউনি ।
- এটাকে বাসর বলে ?
- বাসর মানেই কি একটা মেয়েকে বস্ত্রহীন করে নিজের সব টুকু চাহিদার আকাঙ্খা গুলো জোর করে আদায় করা ? নাকি একটা মেয়ের যন্ত্রণা গুলো যে কি পরিমাণ তা উপেক্ষা করে নিজের শক্তি প্রয়োগ করা ?
ফারহানের কথায় আজ অবাক অয়নন্দিতা । স্তব্ধ তার সব কিছু । বাকরুদ্ধ হয়ে এক নজরে পলকহীন ভাবে চেয়ে আছে সে ফারহানের দিকে । এই মানুষটাকে কেন জানি মুহুর্তের মাঝেই মনে ধরেছে তার । ইচ্ছে হচ্ছিল নিজের সবটুকু দিয়ে আঁকড়ে ধরতে তাকে । তবে লজ্জা নামক এক অদ্ভুত অনুভূতি বার বার আটকে দিচ্ছে তাকে । অয়নন্দিতার দিকে তাকিয়ে থেকে ফারহান বলে ,
- এভাবে তাকিও না , প্রেমে পড়ে যাবে । আর একবার প্রেমে পড়ে গেলে আমায় ছাড়া কিছুই ভালো লাগবে না তোমার । সব কিছু শূন্য লাগবে তোমার কাছে ।
- যদি বলি , একবার প্রেমে পড়ার চেষ্টা করাই যেতে পারে , তখন ?
- তখন ,
তোমার ভেজা চুলে মুখ গুজে সেই চুলের ঘ্রাণের নেশায় মাতাল আমি হবো ,
এতটাই আসক্ত করে ফেলবো তোমায় যাতে সেই নেশায় মাতাল হয়ে তুমিও আমায় ছাড়তে না পারো ।।
চলবে………………………
লেখকঃ জান্নাতুল ফেরদৌস
Leave a Reply