পি টিভি নিউজ ডেস্কঃ ঈদের নামাজ ঈদগাহে পড়া সুন্নত। বৃষ্টির কারণে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মসজিদে পড়েছিলেন, তাই কারণবশত ঈদের জামাত মসজিদে পড়া যায়।
কোভিড১৯ এর মধ্যে সরকারের নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ মসজিদে পড়ুন। আলাদা ইমাম নিয়ে প্রয়োজনে একাধিক জামাত করুন।
নিজের জায়নামাজ, পাক করে ধোয়া তোয়ালে, গামছা বা বেডশিট সাথে নিয়ে মসজিদে বিছিয়ে নামাজ পড়ুন। এতে প্রতি জামাতের ফাঁকে ফাঁকে মসজিদের ফ্লোর নতুন করে সেনিটাইজ করতে হবে না।
জটলা পাকিয়ে না দাঁড়িয়ে এবং অযথা ঘোরাঘুরি না করে, কেবল ঈদের মূল ইবাদতটি আমরা পালন করি। যারা নানা জায়গায় আছেন, তারা এবার ঈদের বেড়ানো ও পুনর্মিলন বাদ দেওয়ার চেষ্টা করুন।
সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় ইনশাআল্লাহ সময়ে সবই করা যাবে। আপনার আমার একটু আবেগ ও অবিবেচনা যেন আপনার অথবা অন্য কারোর ক্ষতি ও কষ্টের কারণ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিৎ।
বাংলাদেশের মসজিদ খোলা থাকায় মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজে শরীক হওয়া কর্তব্য। কোথাও সুনির্দিষ্ট কারণে ফুল লকডাউন থাকলে গ্রামের কমন উঠান, এপার্টমেন্টের নামাজখানা, ছাদ, কাচারি ঘরে ঈদের জামাত করা যাবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতি অনুসরণ করে এসব জামাত হতে পারে।
জুমার নামাজ সহি হওয়ার মতো শর্ত ঈদের জামাতেও আছে। পার্থক্য হলো তিনটি। ১. ঈদের আজান নেই। ২. ঈদের খুতবা নামাজের পরে আর জুমার খুতবা নামাজের আগে। ৩. ঈদের নামাজে কিছু বাড়তি তাকবীর দিতে হয়। প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহা ও কেরাতের আগে। শেষ রাকাতে কেরাতের পর রুকুতে যাওয়ার আগে।
ঈদের জামাত সূর্য কিছু ওপরে ওঠার পর থেকে মধ্য দুপুরের আগে পর্যন্ত পড়া যায়। সময় হিসাবে ধরুন, সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে বেলা সাড়ে এগারোটার মাঝের সময়টি।
মুসাফাহা বা দুই হাতের মিলন এবং মুআনাকা বা কোলাকুলি ঈদের সাথে সম্পর্কিত কোনো বিশেষ আমল বা ঈদের অংশ নয়। এ দুটি সারাবছরের সুন্নত আমল। বৈশ্বিক মহামারি সংকট মুহূর্তের ঈদে এই সংস্কৃতি ও অভ্যাসগত মুসাফাহা, মুআনাকা না-ই বা করলেন। মুখে সালাম ও শুভেচ্ছা বিনিময় করুন।
যারা বাস্তব ওজর বশত ঈদের জামাতে শরীক হতে অপারগ, আশা করা যায়, ওজরের কারণে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিবেন। ঈদের নামাজ একা একা পড়া যায় না। জামাতের ব্যবস্থা করতে না পারলে এ নামাজ একা পড়া যাবে না। জুমার বদলে জোহর পড়ে নেওয়া মতো ঈদের নামাজের কোনো বিকল্পও নেই। অপারগ অবস্থায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।
জননিরাপত্তা, জরুরী নাগরিক সেবা, কড়া লকডাউনে আবদ্ধ, চিকিতসা, সিরিয়াস রোগীর খেদমতে নিয়োজিত ইত্যাদি একান্ত জরুরী অবস্থায় একজন ইমাম দুই কিংবা তিনজন মুসল্লী নিয়ে নিজ অবস্থানস্থলেও ঈদের জামাত পড়ে নিতে পারবেন। আলেম ইমাম না পাওয়া গেলে, ইমাম সাধারণ নামাজি ও ইমামতের নিয়ম জানা তুলনামূলক ধার্মিক ব্যক্তি হলেও চলবে।
খুতবা দিতে সক্ষম না হলে প্রথম খুতবায় আউজুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, সূরা ফাতিহা, দুরুদ শরীফ ও রাব্বানী আঙিনা ফিদ্দুনিয়া…পড়ে দিলে চলবে। মাঝখানে তিনবার সুবহানাল্লাহ বলা পরিমাণ বসে, আবার দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় খুতবায় আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহসহ সূরা আনা নাসর অর্থাৎ ইযা জাআ সূরাটি পাঠ করে দিলেও চলবে। এ পরিমাণ পাঠ জুমার খুতবা হিসাবেও জরুরী অবস্থায় পড়া যায়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে গুনাহ ছাড়ার ও নেক আমল করার তাওফীক দিন এবং বিশ্বকে বালা-মুসীবত, মহামারী, রিজিকের সংকীর্ণতা, আর্থিক সংকট ও সমুদয় শঙ্কা থেকে মুক্ত করে দিন। রমজান আবারও আসুক সকলের জীবনে, ঈদ হোক জাহান্নাম থেকে মুক্তির ফায়সালা লাভের আনন্দে আনন্দময়।
Maulana Ubaidurrahman Khan Nadwi
চেয়ারম্যান ও মহাপরিচালক, ঢাকা সেন্টার ফর দাওয়াহ এন্ড কালচার।
Leave a Reply