গল্প
সকালের দিকে ঘুম ভাঙে অয়নন্দিতার । ফারহানের সাথে নিজের শরীরটা লেপ্টে থাকা অবস্থায় ঘুম ভেঙে যায় তার । ফারহান তখন ঘুমের ঘোরে । দুনিয়া দারির খবর নেই তার মনে হচ্ছিলো যেন পরম নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে সে । ফারহানের গলায় নিজের কিছু চুল আটকে থাকতে দেখে অয়নন্দিতা । উঠতে হবে তাকে এখন , কিন্তু ফারহান তাকে এমনভাবে জড়িয়ে পেঁচিয়ে ধরে রেখেছে যে উঠতে পারার সম্ভাবনা একদম কম । কিভাবে উঠবে সে এখন , সে উঠতে গেলেই নাড়াচাড়া পড়বে । আর নাড়াচাড়া পড়লেই ফারহানের ঘুম নষ্ট হবে । ঘড়িতে নজর দিতেই দেখে সাড়ে ৮ টা বেজে গেছে । বিয়ের পর এই প্রথম এত দেরি হলো আর অয়নন্দিতা এখনও নিচে যায় নি । ভাবতেই নিজের কাছে লজ্জা লাগছে তার । তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়েই ফারহান নাড়াচাড়ায় উঠে যায় ।- এই , এত নড়াচড়া করো কেন তুমি ? – আমি উঠবো , দেখি সরো । – পরে উঠো , – আরে নাহ , কি বলো পরে উঠবো । কয়টা বেজে গেল , মা কি ভাববে । বেচারি একা একা সব করছে হয়তো । – মা বুঝবে , – কি বুঝবে ? – বুঝবে তার বউমা আজ কেন নিচে নামে নি ।ফারহান ঘুমের মাঝে থেকে এইসব বলছে , ফারহানকে তখন অসম্ভব রকম হ্যান্ডসাম লাগছিল । অয়নন্দিতা না চাইতেও হেসে দেয় । মনে মনে মাশা-আল্লাহ বলে নিজেকে ফারহান থেকে ছাড়িয়ে নেয় অয়নন্দিতা । ফারহান তখনও অয়নন্দিতার হাত ধরে রেখেছে ।- যেও না প্লিজ , – কাজ আছে ফারহান । তুমি কি আরও ঘুমাবে ? – হ্যাঁ , আমার ঘুম এখনও ভালোভাবে হয় নি । – তবে ঘুমাও , চোখই তো খুলতে পারছো না তুমি । – এই শুনো , – হ্যাঁ বলো , – ফ্রেশ হয়ে আমার পিঠে মুভ দিয়ে দিও । – কেন , কোথাও ব্যাথা পেয়েছো নাকি ? – হ্যাঁ , কাল রাতে । – কাল রাতে ? কোথায় কখন ব্যাথা পেলে ? – এই তুমি নখ কাটবা , স্টাইল করে নখ রেখেছো আমার পুরো পিঠ ছিলে ফেলেছো , ফাযিল নারী ।ফারহানের কথা শুনে মুহুর্তেই অয়নন্দিতার মেজাজ খারাপ হয়ে যায় । ফারহান যে তার সাথে ফাইযলামি করছে তা ইচ্ছে করেই করছে । অয়নন্দিতা ফারহানকে ঘুমের মাঝে রেখেই এক ঘুষি দেয় পিঠের মধ্যে ।- ওফ ওফ ওফ , করলা কি তুমি ? – ব্যাথা কমেছে ? – ব্যাথা বাড়াতে তো বলি নি । – কথা কম বলবা , আমার নখ ঠিকঠাক আছে , আর তুমি যে কাল রাতে ,,,,,,,,,,অয়নন্দিতা বলে আর শেষ করতে পারে নি , তার আগেই ফারহান তাকে একদম নিজের কাছে টেনে নেয় ।- ছাড়ো তো ,,,,, – হুশশশ , চুপ । তুমি অনেক নরম চরম , চুপ করে শুয়ে থাকো তো আমি ঘুমাই । – ফারহান ছাড়ো প্লিজ , আমি উঠবো । – সত্যি উঠে যাবে ? – হ্যাঁ ,তুমি ঘুমাও কিছুক্ষণ । – ওকে যাও ।এই বলে ফারহান অয়নন্দিতাকে ছেড়ে দেয় । ঘুমের রাজ্যে আবার পা রাখবে সে । অয়নন্দিতা ওয়াসরুমে গিয়ে গোসল সেড়ে নেয় । রুমে এসে হালকা পাতলা টুকটাক রেডি হয়ে নিচ্ছে । কারণ নিচে সবাই আছে । সেখানে অগোছালো ভাবে গেলে সবাই খারাপ মনে করতে পারে । অয়নন্দিতার শাড়ি পরার ফাঁকেই ফারহানের ফোন বেজে উঠে ।- ফারহান ফোন বাজছে । -…………….. – ফারহান , ফোন আসছে তো -……………… – ফারহান , এই ফারহান ফোন বাজতেছে আর তুমি ফোন রিসিভ করছো না কেন ? -………………. – এই ফারহান ফোন বাজে কিন্তু । -………………..অয়নন্দিতা এতবার বলার পরেও ফারহান আর জাগে নি । তাই নিজেই মোবাইলটার কাছে যায় । মোবাইল টা হাতে নিতেই দেখে মোবাইলের স্ক্রীনে suha নামের একটি শব্দ ভেসে উঠেছে । রিসিভ করবে না দ্বিধা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল কিছুক্ষণ সে । তারপর আবার ডেকেছে ফারহানকে ।- ফারহান শুনছো , এই -……………- রাতে কি মদ গিলেছো নাকি আশ্চর্য , ডাকলেও শুনো না ।রাগ দেখিয়ে নিজেই ফোনটা রিসিভ করে ,- হ্যালো আসসালামু আলাইকুম । – ওয়ালাইকুম আসসালাম , ফারহান সাহেব কোথায় ? – ঘুমোচ্ছে । – আপনি কি অয়নন্দিতা ? – জ্বি , – ভালো আছেন ? – ভালো , আপনি ?- আমিও ভালো , আপনি আমায় চিনেন ? – কাল রাত ১১ টা অবদি চিনতাম না । তবে এখন চিনি ।- রেগে আছেন আমার উপর , তাই না ? – আপনি তো আমার ক্ষতি করেন নি , আর তাছাড়া কখনও দেখিও নি । রাগ করার তো প্রশ্নই আসে না । – আপনার জায়গায় অন্যরা হলে অন্য কিছু ভাবতো , ইনফ্যাক্ট ভেবেছেও অনেকে । – গতকাল রাতে ফারহানকে বলেছিলাম , আমি ওর এক্স গার্লফ্রেন্ডদের মত নই । কথাটা আপনার জন্যেও বরাদ্দকৃত হলো । – একদিন আসুন না বাসায় । – এখানে বিয়ের ঝামেলা এখনও শেষ হয়ে উঠে নি । ফ্রী হলে এক সময় যাবো । – একটা কথা বলার ছিল । – হ্যাঁ , বলুন না । – আসলে ফারহান সাহেবকে একটু লাগতো । একটু দরকার ছিল আমার । – ফারহান তো ঘুমোচ্ছে , অত্যন্ত বেশি প্রয়োজন কি তাকে ? – জ্বি , – আমায় বলা যাবে কি ? বলা গেলে বলতে পারেন । – আসলে ফারহান সাহেব গতকাল বলেছিলেন , আজকে ৯ টার পর গাড়ি পাঠিয়ে দিবেন । আমার বাচ্চাটাকে নিয়ে হসপিটালে যাবো । ওর টীকার তারিখ আজ । – ওহ , তাহলে আপনি রাখুন আমি এক্ষুনি ও-কে ডাকছি । – জ্বি আচ্ছা ।অয়নন্দিতা ঘুরে ফোন রাখতেই দেখে ফারহান আড়মোড়া দিচ্ছে । ফারহানকে দেখেই অয়নন্দিতার মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায় ।- ফারহান ,,,,,,?- হ্যাঁ , – রাতে কি মদ গিলেছো নাকি , কেমন ঘুম এইগুলা এতবার ডাকলাম সাড়াশব্দ দেও না কেন ? – ওয়েট ।ফারহান উঠে খাটের সাথে হেলান দিয়ে মোবাইল হাতে নেয় । কাকে যেন ফোন করছে সে । তার মন কেন যেন বলছিল , “হয়তো সুহাকেই ফোন দিবে” ।- হ্যালো সাদ্দাম , কোথায় তুমি ? – অফিসে , কেন স্যার ? – গাড়ি নিয়ে সুহার বাসায় যাও । সুহা হসপিটালে যাবে । – জ্বি স্যার । – আর হ্যাঁ শুনো , – জ্বি স্যার , – সুহাকে এ মাসের খরচ টাও দিয়ে দিও । – ওকে স্যার । – রাখছি ।ফোন টা রেখেই অয়নন্দিতাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই টান দিয়ে তাকে নিজের কাছে এনে একদম বিছানাতেই শুইয়ে দেয় ফারহান ।- মদ খেয়েছি কিনা ? হ্যাঁ খেয়েছি তো , তুমি নামক কড়া প্যাকটা গতকাল রাতে এমনভাবে মাথায় চেপে গেছিল যে আর কিছু বুঝিই নি । এখন তুমিই আমার সেই নেশা কাটানোর লেবু পানি । – সব শুনেছিলা তাই না ? – হ্যাঁ , – সাড়া দাও নি কেন ? – ভাবলাম সুহার সাথে একবার অন্তত কথা হয়ে যাক তোমার ।– বলেছিলাম তো যে আমার এইসবে কিছু আসে যায় না , তবুও ? – নারীর হৃদয় বড্ড সন্দেহবাতিক , তুমি না করলেও এই হৃদয়টা করবে । তাই ইচ্ছে করেই কথা বলি নি ।- সব বুঝো তাই না ? – হু , ফারহান শেখ নারীর ভেতরটা পড়তে জানে ।অয়নন্দিতা বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে ফারহানের দিকে । অয়নন্দিতার তাকানো দেখে অয়নন্দিতাকে দুইহাতে শুয়ে থাকা অবস্থায় জড়িয়ে নেয় ফারহান । তারপর কানের কাছে এসে গুন গুন করে বলে ,- বলেছিলাম না এইভাবে না তাকাতে , প্রেম হয়ে যাবে । – হয়ে গেছে তো । – হয়ে গেছে ? – হ্যাঁ ,- উফফফফ , এখন কি হবে ? – তাই তো কি হবে এখন মিষ্টার শেখের ?তারপর কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে অয়নন্দিতা মুচকি হেসে ফারহানের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে দেয় । ফারহান এতে হালকা অবাক হয়ে গেলেও পরবর্তীতে সেও জড়িয়ে ধরে অয়নন্দিতাকে ।অন্যদিকে , শ্বশুরবাড়ির সবার সাথে ডাইনিং রুমে বসে নাস্তা খাওয়া শেষ করে সাজি । বিয়ের পরদিন ছেলের বউয়ের হাতের বানানো পায়েশের চল অয়নন্দিতার দাদার বাড়ির নিয়ম । সেই নিয়ম সাজির ক্ষেত্রেও পড়ে । কিন্তু সে তো পায়েশের পা টাও জানে না । ভয়ের চোটে কাউকে বলতেও পারে নি । কিন্তু অয়নের সূক্ষ্ম চোখ যেন সাজির এই সমস্যাটা অনায়াসেই ধরে ফেলে । সবার সামনে কিছু বলতেও পারছে না সে সাজিকে । তখনই ফারুকে শিখিয়ে তার সাথে রান্নাঘরে পাঠিয়ে দেয় অয়ন । ফারু বেশ ভালো , শুধু ভালো না এদের তিন ভাই বোনের চরিত্রটাও প্রায় একই রকম । ফারু তো আরও ভালো । সবার চোখের আড়ালে গিয়ে রান্নাঘরে টপকে মায়ের কাছে যায় সে ৷- আম্মু , এইদিকে আসো । – কি হয়েছে আবার ? – আম্মু ফুপি তো অনেক ফাযিল । – ফারু ,,,, এইসব কি বলিস । – আম্মু ফুপি জানে যে ভাবী পায়েশ রান্না করতে পারবে না ৷ সে সব সময় আদরে থেকেছে । ফুপি জানেই যে পায়েশ রান্না করতে পারবে না তাই আরও জোর করেই পায়েশ রান্না করতে বলছে যাতে তোমাকে কথা শুনাতে পারে । – আমাকে আগে বলবে না যে ও রান্না করতে পারে না ৷ – ভয়ে বলে নাই । – আপা সব সময় এমন কুটনী গিড়ি করে আসছে ৷ নতুন নতুন আমাকেও শান্তি দেয় নাই এখন ছেলের বউয়ের পিছনে লাগছে ৷ এক কাজ কর তোরা কি জানি দেখোস ইউটিউব না কি , ওইটা দেইখা ওরে রান্না বসাতে বল । আমি ফাঁকে ঝোঁকে এসে দেখে যাবো । – আচ্ছা আম্মু ।এভাবেই অয়নের বুদ্ধিতে , তার মায়ের হাতেই বেশিরভাগ পায়েশটা রান্না করায় ফারু । তারপর সবার সামনে সাজি রান্না করেছে বলে চালিয়ে দেয় অয়নের মা রোকেয়া বেগম । সেইসবই ভাবছিল সাজি রুমের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ।- মানুষ গুলো আসলেই খুব ভালো । একদম সহজ সরল মনের । ভেতরে কোন পেচগোজ নেই । এদের দেখলেই বোঝা যায় ভাবী এত ভালো কেন ।এরই মাঝে অয়ন রুমে ঢুকে । রুমে ঢুকে এক নজর সাজিকে দেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে টুকিটাকি নাড়ছিল । আড় চোখে অয়নকে দেখছে সাজি । সাদা পাঞ্জাবিতে বেশ সুন্দর লাগছিল অয়নকে । তার নিজের ভাইয়ের মতই লম্বা চওড়া তার স্বামী । এমন ৫/১০ টা মেয়েকে কাত করে ফেলে দেয়ার ক্ষমতা রাখে তার স্বামী ।- আমি তোমার বর । তোমার বিয়ে করা স্বামী আমি । বলো তো তোমার সামনে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে থাকতে পারি । এইভাবে আড় চোখে দেখতে হবে না আমায় ।হঠাৎ করেই অয়নের মুখ থেকে এমন কথা বের হওয়ায় অনেকটা লজ্জায় পড়ে যায় সাজি । ইশশ , কেমন হয়ে গেলো ব্যাপার টা । তবুও মনের ইচ্ছাতেই সে দেখেছিল তার বরকে । অয়ন তখন জিজ্ঞেস করছিল ,- এখানে সমস্যা হচ্ছে না তো ? – উহু , – তোমাদের ডুপ্লেক্স বাড়ির মত না কিন্তু , একটু কষ্ট হবে । তবে মানিয়ে নিতে হবে , পারবে ? – হু , – তোমার তো এখন ফোর্থ সেমিস্টার চলছে তাই না ? – হু ,- পড়াশোনা করতে হবে কিন্তু , বাদ দেয়া যাবে না , কেমন ? – হু , – উহু , হু এছাড়া কথা নেই ? কাল রাতে তো বেশ ভালো মত কথা বললে । – ধন্যবাদ । – ধন্যবাদ ! কেন , হঠাৎ ধন্যবাদ কেন ? – এমনি । – ভাই রে ভাই , ধন্যবাদ এত স্বস্তা যে কেউই দেয় । এখন ঘরের বউও দেয় ।অয়নের কথায় ফিক করে হেসে দেয় সাজি । সাজির হাসি দেখে অয়ন নিজেও খানিকটা হাসে । সাজির মাথায় এতটুকু এসেছে যে তার বরটা তাকে হাসতে দেখতে চায় । মানুষ টা আর যাই হোক অন্যকে হাসাতে বেশ ভালো পারে । ঠিক যেন অয়নন্দিতার ডুপ্লিকেইট ।- গোসল করে যোহর নামাজটা পড়ে নিবে , তবে বাসায় থাকা আত্মীয়রা এটা ভালোর চোখে নিবে কেমন ? – আচ্ছা , – আচ্ছা শুনো , বিয়ের দিন তোমার পাশে একটা মেয়ে ছিল কালো শাড়িতে , কে সে ? – ওটা আমার সব থেকে কাছের বান্ধবী । সে খুব খুশি এই বিয়ে টাতে । – তাকে দেখে কি মনে হয়েছে জানো ? – কি ? – সে যেন একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরীতে এসেছে । আমাদের বিয়েতে সে শোক দিবস পালন করে । – হা হা হা , – হা হা হা , – আমি তো তাকে দেখে তারিখ + মাস ভুলে গেছি । ফারুকে জিজ্ঞেস করি আজকে কি ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ । ওই পাজি তো হেসে খুন । – হা হা হা , – হা হা হা , এইভাবেই হাসবে সারাজীবন , সারাজীবন বলাটাও ঠিক না , যতদিন আমার কাছে থাকবে ততদিন হাসবে । আর আমি না থাকলে তো নাই হয়ে গেলাম , তাই না ?অয়নের বলা কথাটা সাজির বুকে ভেতরটাকে ঝাঝড়া করে দেয় নিমিষেই । সে যেন দুচোখে অন্ধকার দেখছে । আর কিছু এই মুহুর্তে মাথায় আসে নি তার । হুট করেই দৌড়ে গিয়ে অয়নের বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে সাজি । ওই সময়টাতে মাথার মস্তিষ্কের রগ গুলো শুধু একটা কথা বলে যাচ্ছে , ” সাজি তাকে আঁকড়ে ধরো , না হয় ফোসকে যাবে ” সাজির এইভাবে তার বুকে পড়ায় একটু অবাক হয় অয়ন । বুঝতে পারে , সাজি কাঁদছে । সাজির কান্নাটা কেন যেন অয়নের ভেতরটাকেও নাড়িয়ে দেয় । হাসানোর আরেকটা বুদ্ধি অটোমেটিক অয়নের মাথায় চলে আসে ,- ভাই রে ভাই , কে তুমি ? এইভাবে একজন বিবাহিত পুরুষের বুকে ঝাপিয়ে পড়লা । আমার সদ্য বিবাহিতা অবুঝ বউ দেখলে ধুনাবে তোমায় সাথে আমাকেও ।অয়নের এই কথাতে সাজি কান্নার মাঝেও হেসে দেয় ।- দেখি দেখি এই নারী কে ? ও বাবা ,,,,,,, এ তো দেখি সেই আমার অবুঝ বউ টা । বাপ্রে বাপ , কি ভয় টাই না পেয়েছিলাম আমি । – হা হা হা ,, – হা হা হা ,, কান্না করবা না কখনও , কেমন ? আমি কথাটা এমনিই বলেছি । – আর বলবেন না । – ওকে ওকে ,,দুজনের হাসার মাঝেই অয়নের মোবাইলে ফোন আসে ।
1পাঞ্জাবির পকেট থেকে মোবাইল বের করে সাজিকে ” এক্সকিউ মি ” বলে অয়ন বারান্দায় যায় ।- হ্যালো , – হ্যালো অয়ন , – হ্যাঁ বলো , কেমন আছো ? – তুমি বিয়ে করেছো ? – হ্যাঁ , গতকাল করলাম । তোমাকে কল দিয়েছিলাম । কিন্তু পেলাম না । – তুমি বিয়ে করে নিলা ? – এটা কেমন প্রশ্ন ? – তুমি না বলেছো তুমি কখনও বিয়েই করবে না , তাহলে এটা কি ? – মানুষ বউয়ের সাথে রাগের চোটে বলে আজ থেকে সিগারেট খাওয়া বাদ । তারা কি সিগারেট খাওয়া বাদ দিয়েছে ? – এটা কেমন কথা অয়ন ? – তুমি এমন করছো কেন ? – তুমি বিয়ে কিভাবে করতে পারো তাও তোমার বোনের ননদকে । – দুই পরিবার মিলেই ঠিক করেছে । বাবা মায়ের বয়স হয়েছে । তাই আর না করি নি । – যেই ছেলে মাহি বলতে অজ্ঞান সে কিভাবে বিয়ে করে । – মাহি কি অয়ন বলে অজ্ঞান ছিল , যদি থাকতো তবে কি চলে যেতো ? – এটা বুঝতে এতদিন লেগেছে তোমার ? – নাহ , ১৫ দিনেই তো নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছিলাম আমি । অবশ্য এতে তোমার আর অয়নন্দিতার অবদান বেশি । – অয়ন আই লাভ ইউ , আমি তোমাকে ভালোবাসি । আর তুমি ? – ভালোবাসা এতই স্বস্তা ? – এক্ষেত্রে স্বস্তা হয় নি ? – নাহ , তবে আমি তো তোমায় বন্ধু ছাড়া তেমন কিছুই ভাবি নি । একজন শুভাকাঙ্ক্ষী ছাড়া আর কিছুই না । – মানে ,,,,,,? – কিছুই না । – তুমি আমায় ভালোবাসো নি অয়ন ? – আমার আচরণে কি তা প্রকাশিত হয়েছিল ? – হয় নি ? – নাহ , আমার তো মনে হয় না । মাহি চলে যাওয়ার পর কষ্ট পেয়েছিলাম খুব । বুঝিয়েছো , সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছো । এখন সেটা আমি বন্ধুত্বের হাত ভেবে ধরেছি । প্রেমিকার হাত ভেবে নয় । – অয়ন ,,,,,, ? – আগামীকাল বউভাত , আমার বউকে এসে দেখে যেও । রাখছি , আল্লাহ হাফেজ ।লাইন কেটে বারান্দা থেকে রুমে ঢুকতেই সাজিকে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অয়ন । অনেকটা অবাক আর কৌতূহল হয়ে তাকিয়ে ছিল সে অয়নের দিকে । আর অয়ন তাকে দেখে শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে স্মিত হাসি দিয়ে বলে ,- শুনে ফেলেছো ? যাক ভালো হয়েছে শুনেছো । ভেতরে চলো , বলছি ।অয়ন সাজির হাত ধরে সাজিকে ভেতরে নিয়ে যায় । আর সাজি তখনও অবাক নয়নেই অয়নকে দেখতে থাকে ।.চলবে …………………………
লেখক: জান্নাতুল ফেরদৌস
Leave a Reply