♥গল্প♥
পি টিভি নিউজ ডেস্কঃ সরাত সবাই মিলে বসে আছে । সাজি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে । লজ্জায় তাকাতে পারছে না । নিজের শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার অতীতটা জানে । এর থেকে লজ্জার আর কিছু হয়তো নেই । সাজি আগের সব স্মৃতি ভুলে গেছে একমাত্র অয়নের ভালোবাসা পেয়ে । কাউকে ভালোবাসতে গেলে বছর কিংবা মাসের প্রয়োজন হয় না । মন টাই যথেষ্ট কাউকে ভালোবাসার জন্য । অয়ন নিজের ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে বুঝেছে না পাওয়ার যন্ত্রণা কাকে বলে হয়তো তার জন্যই আঁকড়ে ধরেছে সাজিকে । আজকের এই পরিস্থিতির জন্য হামিদ সাহেব এবং রোকেয়া বেগমের দুইজনের কেউই হয়তো দায়ী নন । আর রইলো কথা রোকেয়া বেগমের তবে এখানে বলতে হয় , একজন মা কখনও এটা মেনে নিবেন না যে তার ছেলের বউয়ের আগে কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক আছে । সেই ক্ষেত্রে তাকেও দোষারোপ করা চলে না । কিছুক্ষণ নিরবতার পর অয়নন্দিতা সিদ্ধান্ত নেয় যে নিজেই সবটা ক্লিয়ার করে দেবে আজ । না হয় রোজ রোজ নতুন অশান্তি বাধবে এই ঘরে । অয়নন্দিতা সবার মুখের দিকে চেয়ে তারপর নিজেই বলা শুরু করে ,
অয়নন্দিতার কথা গুলো মন দিয়ে সবাই শুনে । কিন্তু কারো মুখেই কোন কথা নেই , অয়নন্দিতাও চুপ করে আছে । নিজের যতটুকু দিয়ে চেষ্টা করার ততটুকু দিয়েই চেষ্টা করেছে অয়নন্দিতা । নিজের সংসার ভেঙেছে একমাত্র এদের সংসার টিকানোর জন্য । নিজের বাবা মাকে সব বুঝিয়ে আয়ত্ত্বে নিয়ে এসেছে সে । এর থেকে আর বেশি কিছু করার ক্ষমতা নেই অয়নন্দিতার । সবার সব কথা শুনে সবাইকে সবার কথার উত্তর দিয়ে অয়ন আর সাজিকে রুমে পাঠিয়ে দেয় অয়নন্দিতা । ফারুকেও রুমে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে সোফার মধ্যে বসে একটা নিশ্বাস ছাড়ে । মেয়েকে এইভাবে বসে থাকতে দেখে হামিদ সাহেব এবং রোকেয়া বেগম মেয়ের দিকে তাকায় । মেয়ের মুখ টা এই ৩/৪ দিনে শুকিয়ে গেছে । হামিদ সাহেব মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে ধরেন । বাবার হাতের স্পর্শ পেয়ে অয়নন্দিতা বুঝে যায় । তার বাবা এই মুহুর্তে কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে । এক গাল হেসে বাবার দিকে অয়নন্দিতা ।
রোকেয়া বেগম মেয়ের হাতের উপর হাত রেখে বলেন ,
কিছুক্ষনের মধ্যেই গলাটা ধরে আসে অয়নন্দিতার । ভেতরটা ভেঙে চূড়ে আসে তার । কিন্তু কাউকে দেখাতে চায় না সে । কাকেই দেখাবে , কেনই বা দেখাবে সে । নিজের ভেতরের আগুনটা না হয় নিজেই নেভাক । এই আগুনে কাউকে পুড়ানোর আর কোন প্রয়োজন নেই তার ।
শেখ ভিলা ,
ফারহান যখনই শুনেছে সাজি চলে গেছে তার শ্বশুরবাড়িতে আর এই বাসায় হামিদ সাহেব এবং অয়ন এসেছে তখনই ফারহান চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে । রমজান শেখের উপর ভিষণ রাগ হয় ফারহানের , রাগ হয় নিজের মায়ের উপরেও । কেন তার বোনকে ওই বাড়ি পাঠানো হলো যেই বাড়ি থেকে তার বোনকে বের করে দেয়া হয় । শত বারণের পরেও ফারহান চিৎকার করতে থাকে তখনই রওশন বেগম বলেন ,
মায়ের মুখের এই কথা শুনে ফারহান আরও রেগে যায় ,
মা ছেলের তর্কাতর্কিতে রমজান শেখ চুপ থাকলেও কিছুক্ষণ পর তিনিও রেগে যায় । ফারহানের উপর তার অনেক রাগ ।
কি প্রয়োজন এইসব আভিজাত্যের যেখানে সন্তানদেরকেই ঠিক মত মানুষ করতে পারি নি আমি ।
রমজান শেখ সোফায় বসে পড়েন । ফারহান ফোপাতে ফোপাতে উপরে যেতে নিলে রওশন বেগম তাকে আটকায় ।
রওশন বেগমের কথাটা শুনার পর ফারহান কেন যেন চুপ হয়ে যায় । একেবারেই চুপ হয়ে যায় । কেন যেন আর একটা কথাও মুখ থেকে বের করে নি সে । যেন মুহুর্তের মাঝেই তার সব কিছু স্তব্ধ হয়ে গেছে । আর কোন কথা না বাড়িয়ে সোজা উপরে চলে যায় ফারহান ।
রাতে খাবার পর অয়নন্দিতা যখন বিছানায় শুয়ে আছে তখনই তার ফোন টা বেজে উঠে । মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে তার শ্বাশুড়িমা মানে রওশন বেগম ফোন দিয়েছেন । শোয়া থেকে উঠে গিয়ে জানালার পাশে ফোন নিয়ে দাঁড়ায় অয়নন্দিতা । রিসিভ করে কানের কাছে নিতেই রওশন বেগমের চাপা কান্না অয়নন্দিতার কানে এসে লাগে ।
রওশন বেগমকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে লাইন কেটে দেয় অয়নন্দিতা । লাইনটা কেটে দিয়ে , দৌড়ে এসে বিছানার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে অয়নন্দিতা । নিজের হৃদয় ভাঙা কান্নাকে দাফন করে বালিশের মাঝে । তার কান্নার আওয়াজ যাতে বাহিরে না যায় সেইজন্য বালিশের মধ্যে নিজের সব চিৎকার বিলিয়ে দিচ্ছে অয়নন্দিতা ।
অয়নন্দিতা যে ভালোবাসে ফারহানকে । এতটাই ভালোবাসে যে সে না চাইতেও ভুলতে পারছে না । রাতের বেলায় তার যন্ত্রণা গুলো আরও প্রকপ হয়ে উঠে । কেন জানি রাতের বেলাতেই দুঃখ গুলো সব নাড়াচাড়া দিয়ে উঠে ।
অন্যদিকে ,
নির্ঘুম রাত পার করছে আরেক জোড়া চোখ । আর সেই চোখ জোড়া ফারহানের । আজ রাতে নিজের মায়ের মুখে ওই কথাটা শুনার পর থেকে কেন যেন তার হৃদয় অন্য রকম লাগছে । কোন কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না সে । কি যেন নেই , কি যেন হারিয়ে গেছে তার জীবন থেকে ।
ফারহান নিজেও ভেঙে পড়েছে । তার মাথায় এটাই জেকে বসে আছে যে অয়নন্দিতা এইসব কিছু জন্য দায়ী । তাই নিজের বোনের সাথে এইসব করার জন্য সে নিজের ভালোবাসাকেও দাফন করতে প্রস্তুত । কিন্তু রাগের পরিমাণ টা এতই বেশি তার যে সে ঠিক ভুল বিচার করতে পারলো না । সব গুলিয়ে ফেলে সব কিছুর উল্টো করে দিলো সে । যার জন্য নিজেকেই না পস্তাতে হয় পরে এটা আর ভাবে নি সে ।
রাতের গভীরতায় এতদিনের বিচ্ছেদের পর অয়নের ভালোবাসার ডাকে আজ কেন যেন সাড়া দিতে পারছে না সাজি । অয়নের ভালোবাসার ছোয়াতেও আজ কেন যেন সাজি কিছুই পাচ্ছে না । তার মাঝে সেই অনুভূতিটুকুই কাজ করছে না । অয়ন যখন সাজির সাথে মিশে একাকার সাজি যেন তখন অন্য চিন্তায় মশগুল । সাজির সাড়া না পেয়ে অয়ন নিজেই সাজির কাছ থেকে সরে গিয়ে সাজিকে প্রশ্ন করে ,
এই বলে অয়ন অন্য পাশ ফিরে ঘুমিয়ে যায় । আর সাজি বিছানা থেকে নেমে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ভেবে যাচ্ছে কি করে ডির্ভোসটা আটকানো যায় ।।
৩ দিন পর ,
বেলা ১১ টা বেজে ২৫ মিনিট । অয়নন্দিতা নিজের রুমে কিছু কাজ করছে । ইদানিং শরীরটা তেমন ভালো নেই তার । জ্বর , ঠান্ডা , কাশি সব বাধিয়ে বসেছে সে । শরীর যেন আস্তে আস্তে অসার হয়ে আসে তার । কাউকে না বুঝালেও সমস্ত চিন্তা তার নিজের মাঝেই ধারণ করে আছে সে । এত আশা করে সংসার করতে যাওয়া মেয়েটা যখন ৬ মাসের মাঝেই বাপের বাড়ি এসে যায় , তার মনের খবর সে নিজেই বুঝে । আজ প্রায় এক সপ্তাহের উপরে সে ফারহানকে দেখে না । যেই মানুষটাকে দেখেই তার সকাল হতো আর আজ এক সপ্তাহে সেই মানুষটাকেই দেখে নি অয়নন্দিতা । আবেগ , ভালোবাসা সবটাই ভেতরে আছে কিন্তু আত্মসম্মান বলেও একটা জিনিস থাকে । আর সেটা একজন মানুষের মাঝে সব থেকে বেশি কাজ করে । ফারহানও এই এক সপ্তাহে অয়নন্দিতার খোঁজ খবর নেয় নি , না অয়নন্দিতা নিয়েছে । এভাবেই কাটছে বিরহের সময় গুলো । ১২ টা বাজতেই হুট করে কলিংবেলের আওয়াজে দরজা খুলে সাজি । রোকেয়া বেগম কে এসেছে জানতে চাইলে সাজি তার শ্বাশুড়িকে মানে রোকেয়া বেগমকে বসার ঘরে পাঠিয়ে দেয় । রোকেয়া বেগম আসাতেই ওই ভদ্রলোক রোকেয়া বেগমকে অয়নন্দিতার কথা জিজ্ঞেস করেন । উত্তরে রোকেয়া বেগম অয়নন্দিতাকে ডেকে বসার ঘরে নিয়ে আসে । অয়নন্দিতার বসার ঘরে যাওয়া নিয়ে একটু সন্দেহ জাগে সাজির মনে । রান্নাঘর থেকে উঁকি দিয়ে বসার ঘরের দিকে কান পাতে সাজি । ভদ্রলোক তখন অয়নন্দিতাকে তার নাম জিজ্ঞেস করছিলেন ।
লোকটির বেশভূষা দেখে মনে হচ্ছিল এডভোকেট । অয়নন্দিতার মন টা সকাল থেকেই কু ডাকছিল । তবে কি দুঃসংবাদ চলেই এলো ? অয়নন্দিতা লোকটির হাত থেকে খাম টি নিয়ে খুলে । খামটি খুলে অয়নন্দিতা চমকায় নি , শুধু মুচকি হেসেছে একটুখানি । এই হাসি টুকুর ভেতর দিয়েই লুকিয়ে গেছে তার ভেতরের রক্তক্ষরণ । এই পরিবারে জীবনে যা ঘটে নি আজ এই পরিবারের মেয়ের সাথে ঘটতে চলেছে । ভাবতেই অয়নন্দিতার মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে । কিছু কিছুই করার নেই , ফারহান যা বলে তাই-ই করে ছাড়ে । বিয়ে করবে বলেছিল , বিয়ে করেছে । বউ বানাবে বলেছিল , বানিয়েছে । তার ভালোবাসার মাঝে বাঁধবে বলেছিল , বেঁধেছে । আর এখন যখন বলেছে ডির্ভোস লেটার পাঠাবে , তাই করলো সে । অয়নন্দিতার হাতে তখন ডির্ভোস পিটিশন । অয়নন্দিতার ঠোঁটের হাসি তার চোখের পানিকে আড়াল করে দিয়েছে । মা আর ওই এডভোকেটের সামনে সোফায় বসে অয়নন্দিতা ডির্ভোস পিটিশনে সাইন করে দেয় । রোকেয়া বেগম কয়েকবার জিজ্ঞেস করার পর অয়নন্দিতা জবাব দেয় যে ” ফারহান ডির্ভোস পিটিশন পাঠিয়েছে ” খুব দ্রুতই হয়তো ফাইল করে দিবে । এই কথা শুনে রোকেয়া বেগমের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে । ওইদিকে রান্নাঘরে যেন সাজির বুকে কামড় পড়ে যায় ডির্ভোসের কথা শুনে । অয়নন্দিতা তখন সাইন করে খামে ভরে কাগজটি তুলে দেয় ভদ্রলোকটির হাতে । কাগজটি ভদ্রলোকের হাতে তুলে দিতে দিতে অয়নন্দিতা বলে ,
অয়নন্দিতা সোজা নিজের রুমে চলে যায় । না কিছু বললো , না একটু শব্দ করলো , মনে হচ্ছিলো যেন নিজেকে সবার কাছ থেকে লুকিয়ে গেলো , এক রকম পালিয়ে যাওয়ার মত । রোকেয়া বেগম সেখানে সোফাতেই বসে আছেন । কিভাবে মানুষকে বলবেন তিনি তার মেয়ের তালাক হয়ে গেছে । কিভাবে সবার সাথে উঁচু গলায় কথা বলবেন তিনি নিজের মেয়ের সুখ সম্পর্কে । এক সন্তানের ঘর বাঁচাতে গিয়ে অন্য সন্তানের সব শেষ হয়ে যাওয় কি করে মা হয়ে মেনে নিবেন তিনি , তাই ভেবে যাচ্ছিলেন । সাজি সেই মুহুর্তে আর একটা কথা না বলে নিজের রুমে গিয়ে রওশন বেগমকে ফোন দেয় । কয়েকবার ফোন বাজার পর ফোন রিসিভ করেন রওশন বেগম । ফোন রিসিভ করে তিনি আর হ্যালো বলতে পারেন নি তার আগেই সাজি চেঁচামেচি শুরু করে দেয় । যার আভাস রোকেয়া বেগম বসার ঘর থেকেই পায় ।
শোন না , বেয়াই-বেয়ান কেমন আছে ?
নিজের মায়ের সাথে কথা বলে ফোনটা খাটের মধ্যে ফিক্কা মেরে ফেলে দিয়ে নিজের কপাল চাপড়ায় সাজি । নিজের প্রতি এই মুহুর্তে প্রচুর রাগ হচ্ছে আর নিজেকে ইচ্ছামত মারতে ইচ্ছে হচ্ছে তার । পই পই করে বলেছিল এই বিয়েটা করতে চায় না সে । তবুও অয়নন্দিতা তাকে এই বিয়েটা করতে বাধ্য করলো । আজ সব কিছুর মূলে এই বিয়েটা । চাপা স্বরে চিৎকার দিয়ে উঠে সাজি ।
রোকেয়া বেগম পেছন থেকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সবটা শুনেন এবং দেখেন । তারপর রুমের ভেতর গিয়ে সাজির কাঁধে হাত রাখেন । হুট করে এইভাবে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পেছনে তাকিয়ে নিজের শ্বাশুড়িকে দেখে একটু নিজেকে সামলে নেয় সাজি । সাজির দিকে চেয়ে থেকে রোকেয়া বেগম একদম চুপ হয়ে আছেন । শ্বাশুড়ির নিরব অসহায় মুখ খানা বলে যেন বলে দিচ্ছিলো , ” আমার মেয়ের সংসারটা এখন তোমার হাতে , বাঁচিয়ে দেও আমার মেয়ের সংসার টা “
সাজি আর কিছু বলতে দেয় নি রোকেয়া বেগমকে । নিজের হাতটা দিয়ে শ্বাশুড়ির হাতে চেপে দেয় সাজি । এই চেপে ধরাটা হয়তো ইংগিত দিচ্ছিলো ভরসার । আর এই ভরসা হয়তো ইংগিত দিচ্ছিলো , ” মা আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করে যাবো তোমার মেয়ের ঘর বাঁচানোর ।
সারা রাত নির্ঘুম ভাবে কাটে অয়নন্দিতার । একদিকে ফারহান বুকের অসহ্য এক যন্ত্রণা নিয়ে রাত পার করছে । অবশ্য এর একটা কারণ আছে , আর কারণ টা হলো আজ কয়েকদিন পর ফারহান অনলাইনে গিয়েছিল , কিন্তু অনলাইনে গিয়েই সে অয়নন্দিতাকে দেখতে পায় । তখন অয়নন্দিতাও অনলাইনে ছিল । ফারহান যেমন অয়নন্দিতাকে দেখেছে তেমনি অয়নন্দিতাও ফারহানকে দেখেছে । তবে অয়নন্দিতা দেখার সাথে সাথে সমস্ত অনলাইন এপ্স ডিলিট করে দেয় । সে চায় না ফারহানের সামনে যেতে কোনদিনও । সে চায় না ফারহানের সাথে তার আর কোনরকম যোগাযোগ হোক । সে চায় না ফারহানের সাথে তার আর কোন রকম কথা হোক । সে ভালোবাসে ফারহানকে , অনেক ভালোবাসে । আর এই ভালোবাসার জন্যই সে চায় না ফারহানকে প্রতি মুহুর্তে তার সামনে দেখতে । আর একটা করনীয় ছিল তার আর তা হচ্ছে নিজের সিমটা চেঞ্জ করা , আজ সকালে পেপারে সাইন করার সময় বাসার ল্যান্ডলাইনের নাম্বার দিয়ে দিয়েছে অয়নন্দিতা । তার মানে তার চিন্তাভাবনাটাই এমন ছিল যে সে সিম বদলে দিবে । কোন এক রাতের গভীরতার সাথে মিলে মিশে একাকার হয়েছিল তারা দুজনে । আর আজ সেই রকম আরেকটা রাতের গভীরতার সাথে সেই ভালোবাসা ময় স্মৃতি টুকুও ভেঙে ফেলে অয়নন্দিতা । নিজের মোবাইক থেকে সিম কার্ড খুলে ভেঙে জানালা দিয়ে ফেলে দেয় সে । তার ধারণা , সিন থাকলেই হয়তো মন চাইবে ফারহানকে ফোন দিতে , যা সে চায় না । আর ফারহান বার বার কেন যেন অয়নন্দিতার অনলাইন চেক করছে কিন্তু প্রায় দুই ঘন্টা পার হয়ে যায় কিন্তু অয়নন্দিতাকে আর অনলাইনে দেখা যায় নি । ফারহানের মন টাও হু হু করে কিন্তু ওই যে রাগ , ইগো । এই রাগ আর ইগো টাই তার সব থেকে বড় সমস্যার কারণ । আর সেদিন রাগের বশে মুখে যা এসেছিল তাই বলে অপমান করেছিল সে অয়নন্দিতাকে । কিন্তু তার একটাই ভাবনা , ” ইচ্ছে করে তার উপর শোধ তুলতে গিয়ে অয়নন্দিতা তার বোন সাজির সাথে এটা করেছে ” আসলে ফারহান রাগের বশে এতটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছিল যে সে এখনও বুঝতেই পারে নি আর নয়তো বুঝার চেষ্টাই করে নি যে সাজি কেন এলো এ বাড়ি কিংবা কেন বের করে দেয়া হলো তাকে ? আর কেনই বা সাজি আবার ফিরে গেল সেই বাড়িতে যেই বাড়ি থেকে তাকে ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া হয়েছিল । ফারহানের রাগের পরিমাণ এতটাই বেশি যে , বোন চলে যাওয়ার পরেও একটাবার বোনকে সে ফোন টা পর্যন্ত করে নি । ফারহানের এইসব ভাবনার মাঝেই হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠে । ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করে সে ,
সাইন করার কথা শুনে ফারহান এক মিনিটের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় । মনের অজান্তেই ফারহানের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে , ” সাইন করে দিয়েছে , তাও এত দ্রুত “
এডভোকেট বশিরের কথা শুনে ফারহান বেশ খানিকটা অবাকও হয়ে যায় । ফারহান আর কথা বাড়ায় নি । তখনই এডভোকেটকে বলে ,
এই বলে এডভোকেট বশির ফোন রেখে দেন । ফোন রাখার পর এডভোকেট বশিরের কথা গুলো কানে বাজতে থাকে ফারহানের । তখন হালকা হেসে সিগারেটে আগুন ধরায় ফারহান । বারান্দায় বসে থেকে অয়নন্দিতা যেই সোফায় বসতো সেই সোফায় তাকিয়ে থাকে ফারহান ৷ কি যেন ভেবে হুট করেই হেসে দেয় , নাকে মুখে ধোঁয়া ছাড়ছে আর বলছে , ” আমার ভালোবাসা টাই তোমায় আজ শক্ত করে দিয়েছে মিসেস অয়নন্দিতা ফারহান শেখ , শক্ত করে দিয়েছে তোমায় ” মোবাইল টা হাতে নিয়ে গ্যালারি তে থাকা আলাদা একটা ফোল্ডার যেখানে শুধুই অয়নন্দিতার ছবি সেই ফোল্ডারটাই ডিলিট করে দিতে নেয় ফারহান । কিন্তু যখনই ডিলিট অপশন টায় ক্লিক করবে তখনই কেন যেন আর ডিলিট করে নি সে ।
মোবাইলের স্ক্রীন লাইট টা অফ করে দেয় ফারহান । আজ তার পুরো ঘর জুড়ে এক নিস্তব্ধতা , এক নিরবতা । যেই ঘর কয়েকদিন আগেও এক নারীর হাসিতে মেতেছিল আজ সেই ঘর টাই ফাঁকা পড়ে আছে । ফারহানের অন্তর বলছে কিছু , ফারহানের মস্তিষ্ক বলছে কিছু । আবারও আরও একবারের জন্যে ফারহান দোটোনায় পড়ে যায় । অন্তর বলছিল , ” সেদিন কি এতটা রাগের কোন কারণ ছিল ? এতটা বাজে ভাবে বলার কিছু ছিল ? একটা বার কি উচিত ছিল না তার কথাটা শুনা ? এত রাগ কেন ? কেন এত রাগ , যে রাগ ধ্বংস বয়ে আনে ” অন্যদিকে মস্তিষ্ক বলছিল , ” একমাত্র বোন আমার , সেই বোনকে কিনা বের করে দেয় , কিভাবে , কোন সাহসে বের করে ? এই শহরের সব থেকে বড় বিজনেস টাইকুন এর বোনকে বের করে দিয়েছে । আর অয়নন্দিতা তো ওর পরিবার সম্পর্কে অবগত ছিল তবে কেন ফারহানের অবর্তমানে সবাইকে রাজি করিয়ে বিয়ে দিয়েছিল নিজের ভাইয়ের সাথে ” ফারহানের অন্তর আর মস্তিষ্ক এক সাথে তাকে পেইন দিচ্ছিলো , যেই পেইন সে নিতে পারছে না । এই মুহুর্তে সব কিছু বিতৃষ্ণা লাগছিল তার কাছে । পাগল লাগছিল নিজেকে নিজের কাছেই । প্রচুর পেইন হচ্ছিলো মাথায় । এখানেও রাগ উঠে যায় তার , কেন এখন পেইন হবে ? পেইন সহ্য করতে না পেরে টি-টেবিলের উপর রাখা মগটাকে এক আছাড় মেরে ভেঙে ফেলে ফারহান ।
এই বলে ফারহান খাটে গিয়ে শুয়ে পড়ে । কিন্তু এখানেও অয়নন্দিতার স্মৃতি , ফারহানের চোখে যেন এই মুহুর্তেও অয়নন্দিতা ভাসছে । যেন অয়নন্দিতা তার পাশে তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে , যেন অয়নন্দিতার চুল তার গলা আঁকড়ে ধরে আছে । ফারহান উঠে গিয়ে বিছানার চাদর সাথে বালিশ কুশন সহ সব ফেলে দেয় মেঝেতে ।
এই বলে ফারহান একটা স্লিপিং পিল খেয়ে ওই এলোমেলো বিছানাতেই শুয়ে পড়ে । কিছুক্ষণ পর দুচোখে তার ঘুম চলে আসে ।
হয়তো ফারহানের মনেও অয়নন্দিতার বিচরণ শুরু হয়ে গেছে । হয়তো দূরে সরিয়ে দিয়েই অয়নন্দিতার ভালোবাসা উপলব্ধি করছে ফারহান । হয়তো অয়নন্দিতাকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে সেও ভালো নেই । কিন্তু ওই যে রাগ , ইগো । এই রাগ আর ইগো টাই তাকে সঠিক কোনটা আর ভুল কোনটা বুঝতে দিচ্ছে না । এমন না হয় যে সব টাই বুঝতে পারলো আর বিনি সূতার মালা খানি ততক্ষণে ছিড়ে গেলো ।।
.
চলবে………………………….
Leave a Reply