গল্প
বেশ কয়েকদিন পার হয়ে যাবার পরও যখন পরিস্থিতি বাগে আনতে পারছে না ফারহান , তখন সে অন্য ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয় । একদিকে , ডির্ভোসের ডেট সামনে এগুচ্ছে । অন্যদিকে , অয়িনন্দিতার সাথে কথা বলতে না পারার যন্ত্রণা তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে । রওশন বেগম এবং রমজান শেখ অনেক চেষ্টা করেছেন কিছুদিন । কিন্তু অয়নন্দিতা তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে নি ।অয়নন্দিতার এই একক সিদ্ধান্তে পাগল প্রায় ফারহান । সে তার ভালোবাসাকে চায় , যতবার সে অয়নন্দিতার কাছে যেতে চেয়েছে ততবারই অয়নন্দিতা সব রাস্তা অফ করে দিয়েছে । ফারহান যেন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে অয়নন্দিতাকে নিজের কাছে ফেরাতে । পারছে না সে , কিছুতেই পারছে না অয়নন্দিতাকে নিজের কাছে ফেরাতে । পাগল পাগল লাগছে তার সব কিছু । কাজে মন নেই তার , কি করবে সে এখন । তাই-ই ভেবে পায় না সে । অনেক কষ্ট করে নিজের শরীরের চামড়া যেন নিজেই কামড়ে খাচ্ছে সে ।নিজে টিকতে না পেরে বোনকে ফোন করে ফারহান । কিন্তু কয়েকবার ফোন বাজার পরেও ফোন টা আর রিসিভ হয় নি । ফারহান বেশ কয়েকবার ফোন দিতেই থাকে , শেষ মেষ ফোন রিসিভ করে অয়ন । মূলত অয়ন দেখেছে ফারহান ফোন করেছে । ইচ্ছে করেই এতক্ষণ রিসিভ করে নি সে । কিন্তু এই মুহুর্তে সাজি রুমে নেই বলে ফোন টা তাকেই রিসিভ করতে হয়েছে । এদিকে ফোন রিসিভ করা মাত্রই ফারহান এক নাগারে বলে যাচ্ছে ,- ফোন দিচ্ছি সেই কখন থেকে একবার রিসিভ তো করবি , তাই না ? নাকি তোরও আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না । এতবার ফোন দিলে রিসিভ করা লাগে তো , তাই না ?ফারহান এক নাগারে কথা গুলো বলার পর অয়ন বলে উঠে ,- সাজি তো রুমে নেই , তাই রিসিভ হয় নিহুট করে অয়নের কথা শুনে ফারহান স্তব্ধ হয়ে যায় । একদম চুপচাপ হয়ে যায় সে । এই সেই অয়ন যাকে সে অনেক অপমান করেছিল । এই সেই অয়ন যাকে সে নিজ বাড়িতেও ঢুকতে দেয় নি । অথচ আজ সেই অয়নই তার সাথে এত ঠান্ডা স্বরে কথা বলছে । ফারহান অনেকটা স্থম্ভিত হয়ে ভাবে এরা ভাই বোনেরা এত চুপচাপ কি করে হয় । এতটা শান্ত কি করে হয় মানুষ । অন্য কেউ হলে ফারহানকে এই মুহুর্তে গালাগালি করতো । কিন্তু অয়ন , এইটুকু বলে একদম চুপচাপ হয়ে আছে । এদিকে সেদিনের ব্যবহার গুলোর জন্য লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হয় ফারহানের । লজ্জা , সংকোচ , ভয় সব দূর করে পরের বাক্যটি মুখে ফুটে আনে সে ।- কেমন আছো অয়ন ?ফারহানের এই প্রশ্নে কি উত্তর দিবে বা কি উত্তর দেয়া উচিত এই মুহুর্তে অয়নের মাথায় ধরছে না । কথা বলতেও রুচিতে বাধছে তার । কিন্তু কি করবে সে । সে এটাও মানে যে মানুষ মাত্রই ভুল করে । কিন্তু সে যা করেছে আদৌ কি ঠিক করেছে ? কিন্তু ফারহানের কন্ঠে আজ তেজ নেই । নেই কোন রাগের ছিটেফোটাও নেই । তবে কি সাজির আর তার মায়ের কথা ঠিক ? বদল গেছে ফারহান । সংকোচ ভেঙে উত্তর দেয় সে ,- আছি আলহামদুলিল্লাহ , তুমি কেমন আছো ?অয়নের কথায় ফারহান যেন আরও গলে যায় । এত সুন্দর করে অয়ন তার কথা বলবে ভাবে নি সে ।- আমি আছি এক রকম । – এক রকম কেন ? – কিছু তো অজানা নেই , সব টাই তো জানো । – ওহ , – অয়ন ,,,,? – হ্যাঁ , বলো । – তোমার কাছে আজ ভাই হিসেবে একটা আবদার করবো , রাখবে ? – রাখার মত হলে রাখবো , বলো । – আমার অয়নন্দিতাকে চাই অয়ন , প্লিজ আমার তাকে চাই অয়ন । – ও তো চায় না ফারহান , যা ও চায় না তা কি করে করবো আমি । – আমি আর পারছি না অয়ন । তুমি কিছু কি করতে পারো না ? – যা নিজের হাতে বন্ধ করে দিয়েছো তা আমরা কি করে খুলবো বলো তো । – অয়ন তুমি কি আমার উপর খুব রেগে আছো এখনও ? – নাহ , রেগে থেকেও বা কি হবে ? আমার স্ত্রীর ভাই তুমি । আমি রেগে থাকলে সে কথা বলতে কুন্ঠা বোধ করবে । তাই রাগ করে থাকারও উপায় নেই । আর তাছাড়া আমি এতটা রেগে থাকতে পারি না । তাই হয়তো মানুষ আমার সাথে খারাপ করতে বেশি সাহস পেয়ে যায় । – দুঃখিত বললেও ভুল হবে , যদি পারো ক্ষমা করে দিও । – আর কিছুদিন পরেই তো তোমাদের কোর্টে হিয়ারিং , ভাবতেও অবাক লাগছে যার হাতে বোনকে তুলে দিয়েছিলাম আর দুই দিন পর সেই বোন সব থেকে মুক্ত হয়ে যাবে । – অয়নন্দিতা কোথায় এখন ? – নিজের রুমে , এখন তো বেশির ভাগ সময় নিজের রুমেই থাকে । – ওহ , তোমার বোন টা অনেক পালটে গেছে অয়ন , অনেক বদলে গেছে সে ।অয়ন বেশ বুঝতে পারছিল ফারহানের ভেতর টা এই মুহুর্তে ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে । কারণ , যেমন একজন নারীই বুঝে অন্য নারীর ব্যাথা তেমন একজন পুরুষও বুঝে আরেক পুরুষের ব্যাথা । অবশ্য বর্তমানে তো এক নারী পারে না অন্য নারীর পরনেত কাপড় টেনে খুলে ফেলে । কিন্তু পুরুষ জাত যদি কাউকে একবার বন্ধু ভেবে ফেলে তখন নিজের জীবন দিয়ে হলেও সেই বন্ধুর সব রক্ষা করে । অয়নও এই সিচুয়েশনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে আগে তাই সে বুঝতে পেরেছে ফারহানের কোথায় কষ্ট হচ্ছে । ফারহানের শেষের কথাটাতেই অয়ন বুঝে গেছে , ফারহানের কন্ঠ টা ধরা ধরা । হয়তো কাঁদছে সে ,- তুমি কি কাঁদছো নাকি ফারহান ? -………….. – কি বলা উচিত বুঝতে পারছি না আমি , না পারছি তোমার জন্যে কিছু করতে না পারছি নিজের বোনের মতের বিরুদ্ধে যেতে । -……………..- আমার বোন টাও ভালো নেই ফারহান , ভালো নেই পাগলি টা । গভীর রাতে একা একা ওই রুম টাতে কাঁদে সে ।মোবাইলের ওপারে ফারহান আর নিজের চোখের পানি আটকে রাখতে পারে নি । গুমড়ে উঠে সে । পরিস্থিতির স্বীকার হলে একটা পুরুষ অসহায় হয়ে যায় । ফারহানও আজ অসহায় । তার একটা ভুল তার সব কিছু উলটে পালটে দিয়েছে । বুকের মধ্যে আজ তার শুধুই হাহাকার ,- ফারহান , কথা বলো । চুপ করে আছো যে । – আমি আমার বউকে চাই অয়ন । – তোমার বউকে তো তুমিই সরিয়ে দিয়েছো । – একটু সাহায্য করবে ? – বলো , – তুমি কি চাও না অয়নন্দিতা আমার কাছে থাকুক ? – আমি চাইলেই কি সবটা হয়ে যাবে ফারহান ? অয়নির মন টাই ভেঙে গেছে ফারহান । – অয়নন্দিতা কি কোথাও বের হয় না ? – এতদিন তো বের হয় নি , শুনেছি কাল বিকেলে কোথায় যেন যাবে । – কোথায় যাবে জানো কিছু ? – সঠিক বলতে পারছি না , সাজি আর মায়ের সাথেই বলছিল তখন । – তবে আমি আগামীকালই রিস্ক টা নিতে চাচ্ছি অয়ন । – মানে,,,,,,,,,,? – তুমি শুধু ও-কে বাসা থেকে বের করো । – তারপর?– কাল ও বাসা থেকে বের তো হবে কিন্তু বাসায় ফিরবে না । – কি বলছো এইসব তুমি ফারহান ? – হ্যাঁ , অয়ন । এছাড়া আর কোন উপায় নেই আমার । কিছু তো করতেই হবে । এইভাবে পারছি না আমি । নাম্বার টা পর্যন্ত পালটে ফেলেছে সে । – ফারহান যা একবার নষ্ট হয়ে যায় তা তো জোড়া লাগবে না । কেন জোর করছো ? – আর একবার চেষ্টা করবো অয়ন , কিছু না হলে তাকে মুক্ত করে দিবো ।ফোন রেখে খাটের এক পাশে বসে আছে ফারহান । যে পাশ টায় অয়নন্দিতা ঘুমিয়ে থাকতো , সেই পাশ টায় এখন ফারহানের শোয় । তার ভালোবাসা টা যে এতটা প্রখর বুঝতে পারে নি সে আগে । এখন যখন হারিয়ে যাচ্ছে , এই মুহুর্তে এসে উপলব্ধি করতে পারছে সে তার ভালোবাসাকে । মোবাইলের গ্যালারি ঘেটে অয়নন্দিতার কিছু ছবি দেখছে ফারহান ।- কেন এত বদলে গেলে বলো তো ? কেন পালটে গেলে । তোমাকে বলেছিলাম লক্ষী বউ হয়ে থাকতে , কিন্তু কি হলো ? সেই তো লক্ষী বউ হয়ে থেকে আমার দেয়া কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বদলে ফেলে নিজেকে । এই তুমি বুঝো না আমি একটু পাগল টাইপ , একবার কি ক্ষমা করা যায় না ? এই মেয়ে , চলে তো গিয়েছো । কিন্তু যেতে যেতে নেশা ধরিয়ে দিয়ে গেছো , যেই নেশায় আজও মাতাল আমি । তোমায় যে আমার কাছে ফিরতেই হবে অয়নন্দিতা । ফিরতেই হবে তোমায় আমার কাছে ।অন্যদিকে , দু’চোখের পাতায় ঘুম নেই অয়নন্দিতার । এই কয়েকদিন সবাইকে “না” করতে করতে সেও ক্লান্ত । ও বাড়ি থেকে বার বার তার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি এসেছে । নিজের বাবা মা পর্যন্ত বুঝিয়েছে , কিন্তু অয়নন্দিতা তার সিদ্ধান্ত বদলায় নি । কিন্ত যত দ্রুত হিয়ারিং ডেট এগিয়ে আসছে ততই অয়নন্দিতার বুকে কামড় পড়ছে । ফারহানকে এই কয়েকদিনে অনেকভাবেই রিফিউজ করেছে সে , কিন্তু আদৌ কি মন থেকে রিফিউজ করতে পেরেছে ?- পারবো তো কোর্টে গিয়ে সাইন টা করতে ? পারবো তো পাশাপাশি থেকে তার দিকে তাকিয়ে ডির্ভোস লেটার নামক দলিলে সবটা শেষ করে দিতে ? সে সময় পারবো তো তার চোখের দিকে চেয়ে বলতে ” এই সম্পর্ক টায় আর থাকতে চাইনা আমি “পরদিন ,বিকেল ৪ টা নাগাদ । অয়নন্দিতা তখন বের হবে । এক বন্ধুর বাসায় যাবে সে । এই ছয়টা মাসে সে তার পারিপার্শ্বিক সম্পর্ক গুলো থেকে ছিটকে পড়েছে । কারণ এই ছয়টা মাস যে সে শুধু ফারহানকেই ভালোবেসেছে । তার গন্ডি টা যে ফারহানেতেই সীমাবদ্ধ ছিল । কলেজ , ক্যাম্পাস , বন্ধু বান্ধবী এই সব কিছুই সে এক পাশে করে দিয়েছে । এ নিয়ে ওদের মাঝে বেশ কিছু ভুল বুঝাবুঝিও তৈরি হয়ে গেছে । ফারহান তার মস্তিষ্কে এমন ভাবেই গেথে ছিল যে সে ফারহান আর সংসার ছাড়া কিছুই বুঝে নি তখন । আজ এক বান্ধবীর বাসায় গেট-টুগেদার রাখা হয়েছে , সবাই যাবে সেখানে । অয়নন্দিতাকেও ইনভাইট করা হয়েছে । তাই সেও যাবে সেখানে আজ । গতকালই বলে দিয়েছে বাসায় ।সাজি , ফারু আর মায়ের কথায় শাড়িই পরে নেয় অয়নন্দিতা । রোকেয়া বেগম মনে করেন , এই সময়ে যদি সবার সাথে দেখা করে কথা বলে আনন্দ করে তবে হয়তো তার মেয়ে এই দুঃখ টা ভুলে থাকবে । সাজিরও একই ধারণা । আর ফারু , সে তো তার বোনকে হাসি খুশি দেখতে চায় । সবার কথার মান রাখতেই হালকা মিষ্টি আর হলুদ রঙের মেশানো শাড়িটা পরে নেয় সে । শাড়ির সাথে ম্যাচ করে হালকা সাজ সেজে নেয় অয়নন্দিতা । গলায় এক ভরির চেইনটা পরে নেয়াতে রোকেয়া বেগম কিছুক্ষণ একটু মন-মালিন্য করেন । তিনি চেয়েছিলেন ভারী কিছু পরুক অয়নন্দিতা , অয়নন্দিতা বরাবরই একদম সিম্পল ভাবে চলাফেরা করেছে , এখনও তাই করছে । সাজি আর ফারুর কথায় তিনি চুপ হয়ে যান । অয়নন্দিতা নিজেকে তৈরি করে কিছুক্ষন ধরে আয়নায় চেয়ে থাকে । নিজেকে আজ নিজের কাছেই অন্যরকম লাগছে । কেন যেন বেশ ভালো দেখাচ্ছে তাকে আজ । আরই মাঝে ফারু এসে বলে ,- আপু একটা টিপ পর তো , তোকে আরও ভালো লাগবে । – তুই কখনও আমায় টিপ পরতে দেখেছিস ? – এখন তো পরতেই পারিস । – নাহ , যা কখনও করি নি তা তখন আর এখন । – তুই এত নিরামিষ কেন ? – আমিষ ছিলামই বা কবে ? আমিষ হলে কি আর এত কিছু দেখতে হতো ?অয়নন্দিতার কথা শুনার পর সাজি আর ফারু কিছু বলে নি । সাজি চুপ করে পাশে বসে অয়নন্দিতাকে দেখছে শুধু । কি দারুন মায়ামাখা মুখ তার ভাবীর । তার ভাইয়ের রাজ কপাল ছিল এমন বউ পেয়েছে । অথচ দুই দিন একেও হারিয়ে ফেলবে তার ভাই । কিন নিয়ে থাকবে তখন তার ভাই এই ভাবনাতেই তার বুকটা হু হু করে উঠে ।সাজিকে এমন চুপচাপ আর অন্য মনষ্ক থাকতে দেখে অয়নন্দিতাও বলে ,- সাজি , -………..- সাজি ,,অয়নন্দিতা খেয়াল করে সাজি তার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে । ফারুও সাজির দিকে তাকায় । পরে ফারু সাজির কাঁধে হাত দিয়ে নাড়া দেয় । ফারুর হাতের স্পর্শে সাজিও নড়ে উঠে ।- কিছু বলছিলে তোমরা ?সাজির প্রশ্নে অয়নন্দিতা তখন বলে ,- কি দেখছিলে ওমন করে এক ধ্যানে ? – কিছু না তো । – দেখছিলে তো ? – হয়তো , – আচ্ছা দেখো তো ঠিকঠাক লাগছে তো আমায় ? – হ্যাঁ , মাশা-আল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে ।অয়নন্দিতাও বুঝতে পারে সাজির মনে কি চলে । বোন তো , বোন মানেই ভাইয়ের কষ্টে একবার হলেও বুক কাঁপে । ভালোবাসে সে তার ভাইকে , দোষ তো আর না । কিন্তু সব জেনেও অয়নন্দিতা চুপ করে আছে । তার কিছুক্ষণ পর সবার সাথে কথা বলে বেরিয়ে যায় ।গেট-টুগেদার এর পার্টি শেষে অয়নন্দিতা তখম রাস্তায় হেটে যাচ্ছে । মোবাইলের ঘড়িতে তখন প্রায় ৮ টা বাজে । হায়রে একটু লেট হয়ে গেছে । লেট হয়ে যাওয়ায় , রাস্তায় তেমন রিক্সাও নেই । কয়েকটা সি এন জি কে বলার পরেও তারা যাবে না বলে দেয় ।অন্যদিকে ,- সে পার্টি থেকে বেরিয়ে গেছে , ফোন দিয়েছিলাম । বললো রাস্তায় আছে , আর হ্যাঁ একাই আছে । বাসায় আসতে মিনিমাম আধা ঘণ্টা লাগবে আরও ।ফোন কানে নিয়ে গাড়িতে স্টার্ট দেয় ফারহান । এই খবরটারই অপেক্ষায় ছিলো সে । মোবাইলে খবর টা পাওয়ার সাথে সাথেই গাড়ি স্টার্ট সে ।- অনেক অনেক ধন্যবাদ ফারু । তোমার কাছ থেকে এতটাও সাহায্য পাবো আশা করি নি । – সাহায্য করতে মোটেও ইচ্ছে ছিল না আমার , ভাইয়ার কথাটাও ভেবে দেখলাম । আর আপনিও যেভাবে চেপে ধরেছেন , কি আর করতাম বলেন তো । – অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে । আজ না হলে তাকে আর কোনদিনও মানাতে পারতাম না । – আপুও ভালোবাসে আপনাকে ফারহান ভাই , আপুও অনেক ভালোবাসে কিন্তু ওই যে অভিমান।সেই অভিমান টাই সে ভুলতে পারছে না । – পাগল হয়ে যাবো ফারু , পাগল হয়ে যাবো এভাবে থাকতে থাকতে । অয়নন্দিতাকে আমিও কম ভালোবাসি নি , কিন্তু রাগ টাই সব নষ্ট করে ফেলে আমার ।- রাগ মানুষকে ধ্বংস করে দেয় ফারহান ভাই । আশা করি এই ধাক্কায় অনেকটাই বদলাবেন নিজেকে । – ফারু , অয়নন্দিতাকে দেখা যাচ্ছে তো । – আর ইউ সিউর ? – হ্যাঁ , অয়নন্দিতাই তো । – ওকে , অল দ্যা বেষ্ট ।কথা বলার ফারহান লাইন টা কেটে দেয় । লাইন কেটে দিয়েই গাড়ি সোজা অয়নন্দিতার সামনে নিয়ে ব্রেক করে । হুট করেই খালি রাস্তায় এইভাবে গাড়ি ব্রেক করায় কিঞ্চিৎ ভয় পেয়ে যায় অয়নন্দিতা । মুহুর্তেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায় তার ।- গাড়ি কি এই শহরে নতুন চালান নাকি । মানুষ গরু কিছুই দেখেন না নাকি ? বেয়াকেল্লের মত গাড়ি চালাচ্ছেন । এক্সিডেন্ট হলে তো রাস্তায় ফেলেই দৌড়াবেন গাড়ি নিয়ে , আশ্চর্য রকম মানুষ ।ফারহান তখন গাড়ি থেকে নেমেই অয়নন্দিতার সামনে এসে দাঁড়ায় । অয়নন্দিতা ফারহানকে দেখেই তব্দা হয়ে যায় । ফারহান তখন এক দৃষ্টিতে চেয়ে দেখতে থাকে তার মায়াবতীকে । অয়নন্দিতার রুপ যেন এই অন্ধকারেও চুয়ে চুয়ে পড়ছে । এই মুহুর্তে এইখানে এইভাবে ফারহানকে দেখেই অয়নন্দিতার মাথা ভো ভো করে উঠে । অয়নন্দিতা ফারহানকে এইখানে আশা-ই করে নি । ফারহান তখন অয়নন্দিতার দিকে এক ধাপ এগিয়ে দিয়ে বলে ,- এত সুন্দর বউকে কি করে গরু কিংবা গাভী বলি ? আমার জান টা যার মাঝে বিরাজ করে প্রতিমুহূর্তে তাকে এক্সিডেন্ট কি করে করি ? তবে মানুষ টা আমি বেয়াক্কেল তা ঠিক । বেয়াক্কেল না হলে কি আর এই লক্ষীকে পায়ে ঠেলে ফেলে দিয়েছি ।ফারহানের কথা গুলো অয়নন্দিতার কানে গিয়ে যেন জ্বলছে । ফারহানের কথা এবং ফারহান উভয়কেই বিরক্ত লাগছে তার এই মুহুর্তে ।- কি সমস্যা , এখানে কি ? – তোমায় দেখতে এলাম । – আমার রুপ বেয়ে বেয়ে পড়ছে না যে আমায় দেখতে আসতে হবে । – নিজের বউকে দেখতে হলে রুপের প্রয়োজন হয় না । – কিহহ , ব,,বউ ,,, বউ । হা হা হাসালেন । আর কয়েকদিন পর যাকে ডির্ভোস দিয়ে দিবেন তাকে বউ বলতে বিবেকে বাঁধে না । – ডির্ভোস হলে তো ! – দূরে থাকুন আমার থেকে । সরেন এখান থেকে আমি যাবো । – হ্যাঁ যাবে তো , তবে বাসায় নয় আমার সাথে যাবে ।ফারহানের কথা শুনে অয়নন্দিতার মাথা আরও গরম হয়ে যায় । অয়নন্দিতা ক্ষেপে গিয়ে বলে ,- গুন্ডামি করেন এখন রাস্তা ঘাটে ? অফিস নাই আপনার , কাজ নাই আপনার ? সরেন এখান থেকে নয়তো চিৎকার করবো । – এই আমি ভালো মানুষ । গুন্ডা নই যে গুন্ডামি করবো । আর নিজের বউকে নিয়ে গেলে গুন্ডামি হয় না । আর তুমি চিৎকার করলে লোকজন আসবে ঠিক কিন্তু যখন আমাদের বিয়ের ছবি দেখবে তখন তোমাকেই ধরে বেঁধেআমার সাথে পাঠিয়ে দিবে । এখন চলো আমার সাথে ।এই বলে ফারহান অয়নন্দিতার হাত ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে আসে । আর অয়নন্দিতাও হাত ঝাড়া দিয়ে উঠে ,- সমস্যা কি আপনার ? আমি আপনার সম্পত্তি নই যে এইভাবে জোর খাটাবেন । – তুমি আমার সম্পত্তি এটা কে বললো , সম্পত্তি হতে যাবে কেন , তুমি তো আমার সম্পদ । সম্পদের মালিকানা এখন আমার হাতে তাই এই সম্পদের উপর অধিকার একমাত্র আমার । – অভিনয় কম করেন ওকে । হাত ছাড়েন আমি বাসায় যাবো । – যাবে , তবে বাসায় না আমার সাথে । – আমি বাসায় যাবো ব্যাস । – যাবে আগামীকাল সকালে যাবে । – কি আশ্চর্য , এ দেখি ফাইযলামি শুরু করে দিয়েছে ।ফারহান অয়নন্দিতার আর একটা কথাও শুনে নি । হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয় অয়নন্দিতাকে । আর অয়নন্দিতা হাত পা ছুটোছুটি করতে থাকে । ফারহান কোন রকম গাড়িতে ঢুকেই গাড়ির লক অন করে দেয় যাতে অয়নন্দিতা বের না হতে পারে । ফারহানের এইসব কান্ড দেখে অয়নন্দিতা না পারছে কিছু বলতে না পারছে কিছু করতে । অয়নন্দিতা সেই মাপের বিরক্ত ফারহানের উপর ।- ফাতরামি করার একটা লিমিটেশন আছে । এইসব ফাতরামির কোন মানেই হয় না । – কথা কম , আজকে কিছু কথা বলবো শুনতে হবে তোমাকে ।এই বলে ফারহান গাড়ি স্টার্ট দেয় । দ্রুত গতিতে গাড়ি এগিয়ে যায় অজানা গন্তব্যে ।।.চলবে…………………….
লেখকঃজান্নাতুল ফেরদৌস
Leave a Reply