নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট বিভাগের করোনা চিকিৎসার একমাত্র ‘ডেডিকেটেড’ হাসপাতাল ‘শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল’। শুরু থেকেই বিভাগের রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালটি। ১০০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। রোগীতে পূর্ণ হয়ে গেছে হাসপাতালের ওয়ার্ড, কেবিন ও আইসিইউর শয্যা। করোনা চিকিৎসার জন্য এখনো নতুন কোনো হাসপাতাল প্রস্তুত করতে না পারায় রোগী ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেটে দ্রুত বাড়ছে করোনা রোগী। শুধু সিলেট জেলায় প্রতিদিন নতুন করে শনাক্ত হচ্ছে অর্ধ শতাধিক আক্রান্ত। গত রবিবার ওসমানী মেডিকেল কলেজ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে শনাক্ত হয়েছেন ৭২ জন। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চললেও সিলেটে এখনো শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোনো হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। কিডনি ফাউন্ডেশন ও প্রবাসীদের সহায়তায় ৩১ শয্যার খাদিমপাড়া হাসপাতাল ও ৫০ শয্যার দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা রোগীদের চিকিৎসা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো হাসপাতাল দুটি প্রস্তুত নয়।
এমতাবস্থায় আক্রান্ত রোগীদের সেবা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা চিকিৎসার জন্য ১০০ শয্যার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে শুরুতে মাত্র দুটি আইসিইউ বেড ছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের চেষ্টায় আইসিইউ ইউনিট সম্প্রসারণ করে সেখানে বসানো হয়েছে ভেন্টিলেটরসহ আরও ১২টি বেড। ১৪ বেডের আইসিইইউ ইউনিট করতে গিয়ে কমে গেছে কয়েকটি সাধারণ শয্যা। বর্তমানে হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ড ও কেবিন মিলে রয়েছে শয্যা রয়েছে ৮০টি। অর্থাৎ আইসিইউসহ মোট ৯৪ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে হাসপাতালটিতে।
কিন্তু গতকাল সোমবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৯১। এর মধ্যে আইসিইউর ১৪টি বেডের মধ্যে ১৩টিতে ভর্তি আছেন রোগী। এই ইউনিটে আর মাত্র একজন রোগী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। সাধারণ ওয়ার্ড ও কেবিনের ৮০ সিটের বিপরীতে ভর্তি আছেন ৭৮ জন রোগী। অর্থাৎ সবমিলিয়ে হাসপাতালে খালি আছে মাত্র তিনটি সিট। এই অবস্থায় এখন হাসপাতালে ভর্তি হতে আসা রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া ছাড়া বিকল্প সুযোগ নেই কর্তৃপক্ষের কাছে।
এদিকে, করোনা চিকিৎসার জন্য খাদিমপাড়া ও দক্ষিণ সুরমার যে দুটি হাসপাতাল প্রস্তুতের কাজ চলছে সে দুটির কোনোটিতেই নেই আইসিইউ ব্যবস্থা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুধু আইসোলেশন ও অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া যাবে হাসপাতাল দুটিতে। কিন্তু সিলেটে দিন দিন যেভাবে করোনা আক্রান্ত জটিল রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে ভেন্টিলেশনসহ আইসিইউ সিট বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে আইসিইউ সিট এনে হাসপাতাল দুটিতে সংযোজন করার দাবি উঠছে।
শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের চিকিৎসা ক্ষমতা প্রসঙ্গে হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র জানান, হাসপাতালে নতুন রোগীর ভর্তির উপায় নেই। পুরো হাসপাতালে একটি আইসিইউ ও দুটি আইসোলেশন সিট খালি আছে। অথচ রোগী বাড়ছেই। এই অবস্থায় করোনা চিকিৎসার জন্য নতুন হাসপাতাল চালু করা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই। এটা যত দ্রুত সম্ভব হবে রোগীদের জন্য তত মঙ্গল হবে।
Leave a Reply