লেখিকা:- মিসেস জুবায়ের
আর টিপের চিৎকার শুনে তিশা পাশে তাকিয়ে দেখে টিপ নেই, টিপকে দেখেই তিশা চিৎকার করে ওঠে ধুপ করে রাস্তায় বসে পরে,
তিশা: আপুইইইইইইইইইইই,
হঠাৎ করেই ঠাসসসসস্ করে একটা আওয়াজ হয়, টিপ গালে হাত দিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে আছে, হ্যা চড় টা টিপের গালেই পরেছে, আর চড়টা নীলই মেরেছে, টিপের পিছু পিছু নীল ও আসে, কিন্তুু গাড়ি থেকে না নেমে চুপচাপ টিপ আর তিশাকে ফলো করে, টিপ যখন বাচ্চাটিকে বাচানোর জন্য রাস্তায় দৌড় দেয় নীল ও টিপের পিছে দৌড় দেয়, নীল টিপের আগেই বাচ্চাটির সাথে টিপকে টেনে গাড়ির সামনে থেকে টেনে নিয়েই টিপের গালে চড় মেরে দেয়, বেচারি টিপ গালে হাত দিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে থাকে, আর নীল রাগি চোখে টিপের দিকে তাকিয়ে থাকে,
তিশা দৌড়ে এসে টিপকে জরীয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়,
তিশা: এই আপুই, পাগল হয়ে গেছিলি কি হতো এক্ষুনি, দুলাভাই না থাকলে কি হতে পারতো তোর ধারনা আছ,
টিপ ভয়ে ভয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে দেখে নীল এখনও ওই রাগি লুকে টিপের দিকে তাকিয়ে আছে, নীলের চোখ দুটো রাগে জলজল করছে, মনে হচ্ছে টিপকে মেরে তক্তা বানিয়ে দিবে, টিপ তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে নেয়, এর মধ্যে এক মহিলা এসে বাচ্চাটাকে জড়ীয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে,
নীল: এতোটা আনরেস্পন্সিবল কি করে হোন আপনারা, বাচ্চাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, এতোক্ষনে কি হতো কোনো ধারনা আছে আপনার, আপনাদের মতো মা এর কাছে বাচ্চারা সেফ নয়,
মহিলা: সরি, আসলে আমি বুঝতে পারিনি,
নীল: সরি মাই ফুট. কি বোঝেন না আপনি, এক্ষনি আপনার বাচ্চার সাথে সাথে আমার ওয়াইফ,
কথাটা বলেই নীল গাড়িতে জোরে করে একটা বাড়ি দেয়, টিপ তো লাফিয়ে উঠে তিশার পিছে গিয়ে দাড়ায়,
মহিলা: সরি আসলে আমি বুঝতে পারিনি ও রাস্তায় চলে আসবে, আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো, দোয়া করি আপনারা সব সময় ভালো থাকেন, মহিলাটি আর কথা না বাড়িয়ে বাচ্চাটাকে নিয়ে চলে গেলো,
তিশা: ভাইয়া রাগ করেন না, যা হবার তো হয়েই গেছে, আপু তো,
নীল: তুমি কি এখন বাসায় যাবে?
তিশা ভালোভাবেই বুঝলো নীল সাংঘাতিক রেগে আছে, আর টিপের কপালে অনেক দুঃখ আছে,
তিশা: আমি বাসায় যাবো,
তিশা যেতে লাগলে টিপ তিশার হাত জড়ীয়ে ধরে,
তিশা: ভাইয়া আমি আপুইকে নিয়ে যাই,
নীল: না
তিশা টিপের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে স্কুটিতে উঠে চলে যায়, নীল গাড়িতে উঠে যায়, টিপ চুপ করে দাড়িয়ে থাকে, ও যে কি করবে বুঝতে পারছে না, টিপের তো ইচ্ছে করছে উল্টো দিকে দৌড় দিতে, ভাবতে ভাবতেই টিপ দৌড় দেবার পজিশন নিয়ে পিছে ঘুরতেই নীলের সাথে ধাক্কা লেগে হুড়মুড় করে পড়ে গেলো,
টিপ : আল্লাহ্ গো, আচমকাই নীল টিপের হাত ধরে টানতে টানতে গাড়িতে নিয়ে ধপ করে বসিয়ে দিয়ে ধরাম করে দরজা লাগিয়ে দেয়, টিপ লাফিয়ে ওঠে, তারপর নিজে ধুপ করে বসে ড্রাইভ করে বাসায় চলে আসে, বাসায় এসে টিপ আর রুমের মধ্যে ঢোকার সাহস পাচ্ছে না, কারন নীলের হাতে একটা চড় খেয়েই টিপ নীলের রাগ সম্পর্কে সব ধারনা করে ফেলেছে, টিপ দরজার বাহিরে দাড়িয়েথেকে পায়চারি করতে থাকে,
এদিকে নীল বাসায় এসে সাওয়ার নিয়ে চুপ করে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ে, টিপের ওপর প্রচন্ড রাগ হয়ে আছে নীলের, আজ ও সময়মত গিয়ে টিপকে না বাচালে অনেক বড় কিছু হতে পারতো, নীল এক মুহুর্তের জন্য টিপকে হারিয়ে ফেলবে ভেবেছিলো, সেই ভয়টা নীলের ওপর রাগ হয়ে জেঁকে বসেছে, তখন রাগের মাথায় টিপকে চড় মেরে দেয়, টিপের সাথে কথাও বলছে না, আর টিপও রুমে ঢোকার সাহস পাচ্ছে না,
টিপ: তুই ভয় পাচ্ছিস কেনো টিপ? তুই তো ভুল কিছু করিস নি, উনি যদি যেচে তোরে মারে তুই কি করবি বল? এটা তোর ও রুম, তুই ঢুকতেই পারিস, কি করবে ও, হুহ মনে রাখিস তোর নাম ও টিপ, টিপ টুকটুক করে রুমের মধ্যে ঢুকে, ঢুকে তাকিয়ে দেখে নীল সোফায় বসে ল্যাপটপে কিছু করছে, টিপকে দেখে নীল মুখ তুলে টিপের দিকে তাকায়, নীলের তাকানো দেখেই টিপ দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে যায়, টিপ অনেকক্ষণ যাবত ওয়াসরুমে বসে আছে, দরজা একটু ফাকা করে নীলকে দেখে আবার দরজা লাগিয়ে দিচ্ছে,
টিপ: ( টিপ তুই এভাবে ভয় পেলে সারারাত এভাবে বসে থাকতে হবে, আর ওই রাক্ষসটা তোকে বের করতে আসবে না, ব্রম্মদৈত্য রুপ ধারন করে বসে আছে, আরে বাবা আমি যদি তখন ওভাবে গিয়েই থাকি কোনো অপরাধ তো করিনি, আর এমন তো নয় আমার কিছু হয়েছে, এমন রুপ নিয়ে বসে থাকার কারন কি? ও কি বোঝেনা ওকে দেখে আমার ভয় লাগছে, নাহ্ আর বসে থাকলে হবে না, যা হবার হবে, টিপ দরজা একটু ফাকা করে তাকিয়ে দেখে নীল দাড়িয়ে আছে, এটার জন্য টিপ মোটেই প্রস্তুত ছিলো না, টিপ আস্তে আস্তে দরজা খুলে বের হয়ে আসলো, তাকিয়ে দেখে দুটো প্লেটে খাবার সার্ভ করা, টিপের খুদাও লেগেছে কিন্তুু নীলের ভয়ে খেতেও পারছে না, নীল গিয়ে সোফায় বসে মাথা নিচু করে এক হাত টান করে সোফায় বসার জন্য ইশারা করে, টিপ তাড়াতাড়ি এসে সোফায় বসে পড়ে তারপর খাবারের প্লেট টিপের হাতে ধরীয়ে দিয়ে নিজে একটা প্লেট হাতে তুলে নেয়, নীল খাবারে হাত দিয়ে টিপের দিকে তাকিয়ে দেখে টিপ চুপ করে আছে, নীলের রাগি লুক দেখে টিপ তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করে, নীল ও খেতে শুরু করে, খাওয়া শেষে নীল একটা বালিশ হাতে নিয়ে বাহিরে যেতে লাগে, তখনই টিপ এসে নীলের সামনে দাড়ায়,
টিপ : কোথায় যাচ্ছেন?
নীল: কিছু বলেনা, কিছু না বলে সাইড কেটে যেতে লাগলে টিপ নীলের হাত টেনে ধরে,
টিপ: এমন করছেন কেনো আমার সাথে? ভুল হয়ে গেছে আমার, সরি বলছি, আর কখনো এমন কাজ করবো না, প্লিজ আমার সাথে কথা বলেন, আপনাকে এভাবে দেখতে আমার ভয় লাগছে, নীল তবু্ও কিছু না বলে বালিশটা ছুড়ে ফেলে দেয়,
টিপ: খুব বেশিই কি বিরক্ত করছি?
নীল: এবারও চুপ
টিপ: আচ্ছা ঠিক আছে, আমিই চলে যাচ্ছি এই রুম থেকে, আমার জন্য আপনাকে অন্য রুমে যেতে হবে না,
এর মধ্যে তিশা ফোন দেয়, টিপ ফোন টা নিয়ে বেলকুনিতে চলে যায় আর নীল রুম থেকে বেরিয়ে যায়,
তিশা: আপুই কেমন আছিস? সব ঠিক আছে তো?
টিপ: আমি কাজটা মোটেই ঠিক করিনি তিশা,
তিশা: তোর তো খারাপ উদ্দেশ্য ছিলো না,
টিপ: আমি এটার কথা বলছি না,
তিশা: তো?
টিপ: জোর করে নীলকে বিয়ে করাটা ঠিক হয়নি,
তিশা: তোর এটা মনে হলো কেনো?
টিপ: জোর করে কারো ঘাড়ে উঠে থাকলে যে কেমন অনুভুতি সেটা ও বাড়ি থাকতে ও বুঝেছি, আর এখানে এসেও,
তিশা: আপুই ভাইয়া তোকে কিছু বলেছে?
টিপ: এখন রাখি রে, কাল কথা বলবো, ভালো থাকিস,
তিশা: আপুই, আপুই,
টিপ ফোনটা কেটে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে,
টিপ: তোমরা খুব স্বার্থপর আব্বু আম্মু, আমায় একা রেখে চলে গেলে, সবার কাছে বোঝা হয়ে গেছি আমি, যার কাছে যাই সেই আমায় দুরে সরিয়ে দেয়, এতিম হয়ে গেছি, তোমাদের দোষ দিবোনা, আল্লাহ্ তোমাদের খুব ভালো রাখুক, যেখানে থাকো ভালো থাকো, এই দোয়া করি,
রাতে নীল বাসায় এসে দেখে টিপ বেড এ নেই, বেলকুনির দরজাটা খোলা, নীল একপা দুপায়ে এগিয়ে গিয়ে থমকে দাড়ায়, টিপ বেলকুনিতে ফ্লোরে বিছানা করে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে, এটা দেখে নীল আরও রেগে যায়, কিন্তুু টিপের ঘুমন্ত মুখটা দেখে আর রাগ করে থাকতে পারে না, নীল টিপের কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে টিপকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেয়,
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে বিছানায় আবিস্কার করে, টিপ বুঝতে পারে নীল ওকে বিছানায় নিয়ে এসেছে, টিপ উঠে আর নীলকে দেখতে পায় না, সার্ভেন্ট এসে টিপকে বলে যায় নীল অফিসে চলে গেছে,
এতে টিপের মনটা আরও খারাপ হয়ে যায়, ও মনে মনে ভাবতে থাকে নীল টিপের ওপর হয়তো বিরক্ত বোধ করছে, টিপ ফ্রেস হয়ে নাস্তা না করেই অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়ে কিন্তুু নীলের গাড়ি তে করে বের হয় না, রিক্সা নিয়ে অফিসে আসে,
আজ সারাদিন টিপ নীলের সামনে যায় না, কোনো কাজ লাগলে অন্য কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দেয়, কিন্তুু নীল সকাল থেকে টিপকে দেখতে না পেরে পাগল হয়ে যায়, কিন্তুু নিজের রাগ আর ইগো উপেক্ষা করে টিপের সামনে আসে না, অফিস ছুটির পরে টিপ বের হয়ে দেখে নীল আর ইরা দ্রুত গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায়, এটা দেখে নীজের অজান্তে টিপের চোখ বেয়ে পানি পড়ে যায়, এর মধ্যে আসিফ টিপের হাত টেনে ধরে,
আসিফ: বেইবি, চলো আজ কোথাও থেকে ঘুরে আসি,
টিপ হেচকা টানে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়,
টিপ: আপনাকে অসংখ্যা বার বলেছি আমাকে ছোবেন না, আমি বিবাহিতা মেয়ে, দয়া করে এ ধরনের ফালতু কথা আমায় বলবেন না,
আসিফ: টিপ তুমি বিয়ে করেছো?কবে? যেটা আজ পর্যন্ত আমি পেলাম না সেটা অন্য কেউ,
টিপ: লজ্জা করেনা আপনার এসব নোংরা কথা বলতে? আর কত নিচে নামবেন আপনি? ছি! মানুষ আপনি? জানোয়ার কোথাকার, টিপ হন হন করে ওখান থেকে চলে আসে,
টিপ বাসায় এসে নীলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে কিন্তুু নীল বাড়ি আসে না, টিপ খাবার নিয়ে বসে থেকে থেকে উঠে পড়ে, এক দিকে সারাদিন না খেয়ে তার পর আবার গায়ে জ্বর, কাল বেলকুনিতে শোবার সময় টিপ ভয় পেয়েছিলো, সাধারনত সেই ভয় থেকেই জ্বর চলে এসেছে, টিপ আর বসে থেকে অপেক্ষা করতে পারে না, বেলকুনিতে বিছানা করতে শুরু করে, বিছানা গোছানো শেষ তখনই নীল ঘরে ঢোকে, আজকে আবার টিপের বিছানা করা দেখে নীল ভিষম রেগে যায়,
নীল: কি হচ্ছে ওখানে?
টিপ: বিছানা করেছি ঘুমাবো,
নীল: ওখানে ঘুমাবা?
টিপ: আমার অভ্যেস আছে, আগে প্রায় ওবাড়িতে শুতে হতো, আমি আপনার কোনো সমস্যা করবো না, আর তাছাড়া আমার মতো এতিমদের জায়গা এখানেই হয়, এতিম কথাটা শোনার সাথে সাথেই নীল গিয়ে ঠাস করে টিপের গালে চড় মেরে দেয়, টিপ গিয়ে বিছানায় ধপ করে পড়ে যায়, নীল টিপের ওপর চিল্লিয়ে ওঠে,
নীল: কিসের এতিম তুই? মরে গেছি আমি? আর একবার যদি নিজেকে এতিম বলিস একদম মেরে ফেলবো তোকে,
চলবে…………….
Leave a Reply