তন্নিষ্ঠা ভাণ্ডারী (সিনহা): করোনা ভাইরাস বা covid-19 -এর সঙ্গে বিশ্বের মানুষ পরিচিত হয়েছে বছর খানেক। প্রথম দিকে চিন থেকে আসছিল আক্রান্ত হওয়ার খবর। শোনা যাচ্ছিল, এই ভাইরাস ভয়ঙ্কর ছোঁয়াচে। কিন্তু নিদর্শন পাওয়া যায়নি প্রথমটায়। তারপর মাস কয়েক যেতে না যেতেই বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে পৌঁছে গিয়েছে সেই অদৃশ্য শত্রু। বছর ঘুরে সেই আতঙ্ক কিছুটা হলেও স্তিমিত হয়েছে। ভাইরাসের শত্রু ভ্যাক্সিনের খবর আশার আলো জোগাচ্ছে। কিন্তু, এরই মধ্যে নতুন আতঙ্ক। করোনা ভাইরাসের নয়া ‘স্ট্রেন’।
গত কয়েকদিনে সেই খবরেই তোলপাড় গোটা বিশ্ব। ইউকে-তে এই নতুন ‘স্ট্রেন’-এর সন্ধান পাওয়া যাওয়ায় অনেক দেশই তাদের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করেছে। প্রভাব পড়েছে সেখানকার অর্থনীতিতেও। কিন্তু সত্যিই ঠিক কতটা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ আছে? প্রকৃতির নিয়মে মিউটেটেড হওয়া ভাইরাস কি সত্যিই আরও ভয়ঙ্কর? রইল কিছু তথ্য:
কীভাবে জানা গেল এই নতুন চেহারার কথা?
বেশ কিছুদিন ধরেই দেখা যাচ্ছিল, দক্ষিণ ও পূর্ব ইংল্যান্ডে অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাস। এরপরই নতুনভাবে পযবেক্ষণ শুরু করেন গবেষকরা। ১৪ ডিসেম্বর ‘হাউস অফ কমনস’-এ দাঁড়িয়ে ইউকে-র স্বাস্থ্য সচিব বলেন, করোনা ভাইরাসের নতুন রূপ চিহ্নিত করা গিয়েছে। আর তার জেরেই নাকি দক্ষিণ ইংল্যান্ডে করোনার এত বাড়বাড়ন্ত। ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইউকে-তে এই স্ট্রেন দ্বারা আক্রান্ত ১১০৮ জনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
কোভিডের এই নতুন রূপ ঠিক কেমন?
করোনা ভাইরাসের প্রোটিনে বারবার পরিবর্তন হতে হতে এই চেহারা নিয়েছে। প্রাথমিক গবেষণা বলছে, পুরনো ভাইরাসের থেকে নতুন স্ট্রেন আরও দ্রুত কারও শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই মিউটেশনকে N501Y বলে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। তবে সত্যিই এই স্ট্রেন আরও বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে কিনা, তা পরীক্ষিত নয়।
আগে কী ভাইরাসের মিউটেশন হয়নি?
যখনই কোনও ভাইরাস একজনের শরীর থেকে আর একজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, তখনই স্বাভাবিক নিয়মেই তার মিউটেশন হয়। সাধারণত এক মাসে ১ থেকে ২ বার মিউটেশন হয়।
SARS-CoV-2 বা করোনা ভাইরাসের অন্তত ৪০০০ মিউটেশন হয়েছে এখনও পর্যন্ত। এর আগে D614G নামে একটি ভ্যারিয়্যান্ট চিহ্নিত করা হয়েছিল, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে এবার অনুমান তার থেকেও বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাস। এছাড়া 20A. EU1 নামে আরও একটি ভ্যারিয়্যান্ট ছড়িয়ে পড়েছিল স্পেনের ফার্ম কর্মীদের মধ্যে। সেটিও অপেক্ষাকৃত ভয়ঙ্কর।
বর্তমান চিকিৎসা পদ্ধতি কী কাজে লাগবে নতুন স্ট্রেনের ক্ষেত্রে?
বছর খানেক হয়ে গিয়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে চিকিৎসক, প্রত্যেকেই অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন এই ভাইরাসকে সঙ্গে নিয়ে চলতে। মোটামুটি চিকিৎসা ব্যবস্থাও নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে। নতুন স্ট্রেনের ক্ষেত্রে সেই চিকিৎসা পদ্ধতি কাজে লাগবে কিনা, তা নিয়ে গবেষণা চলছে, তবে UK এবং WHO-এর বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পুরনো পদ্ধতিতেই সারবে এই করোনা।
কাজ করবে ভ্যাক্সিন?
Moderna ও Pfizer, দুই ভ্যাক্সিন প্রস্তুতকারী সংস্থা দ্রুত নতুন ভ্যারিয়ান্টের উপর ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে শুরু করেছে। ফাইজারের পার্টনার BioNTech জানিয়েছে, নতুন মিউটেশনের জন্য ৬ সপ্তাহের মধ্যে ভ্যাক্সিন তৈরি করে ফেলা সম্ভব। অন্যদিকে, আর এক সংস্থা Zydus Cadila আগেই জানিয়েছিল যে, যদি ভাইরাসের মিউটেশন হয় তাহলে ভ্যাক্সিনও মডিফায়েড করা সম্ভব। তিন মাসের মধ্যেই সেই ভ্যাক্সিন তৈরি করা যাবে। যদিও বর্তমানে যেসব ভ্যাক্সিন বাজারে এসেছে সেগুলি কাজ করছে কিনা, সেই পরীক্ষার ফল এখনও হাতে আসেনি।
WHO কী বলছে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি বিষয়ক প্রধান মাইক রায়ান বলেন, এই নতুন চরিত্রের করোনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। তবে এটিকে তার নিজের মতো চলতে দেয়া যাবে না। হু জানিয়েছে, কোভিড ১৯ বর্তমান চরিত্র আরও প্রাণঘাতী এমন কোনোও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এই নতুন ধরণের ভাইরাসটি আরও সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমনই তথ্য মিলছে।
Leave a Reply